খুলনায় ঝলমলে রোদ, বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২১ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫৬ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে খুলনার বটিয়াঘাটায় একজন মারা গেছেন। তবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে খুলনা উপকূলে কোনো ঝড়বৃষ্টি নেই।
আজ সকাল থেকেই ঝলমলে রোদ ওঠে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে রোদ–মেঘের লুকোচুরি শুরু হয়। ঝড়ের রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত খুলনার উপকূলীয় উপজেলাগুলোর বেশির ভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ থেকে থেকে যাচ্ছে-আসছে। যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙেছিল, সেগুলোর কিছু কিছু আপাতত মেরামত করা গেলেও অনেক জায়গায় এখনো বাঁধ দিয়ে ভেতরে পানি ঢুকছে। সড়কের পাশে এখনো উপড়ে পড়ে আছে বিভিন্ন গাছ।
খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, খুলনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় থাকা ১৭টি স্টেশনের মধ্যে ১৫ স্টেশন চালু করা গেছে। গতকাল রাতের মধ্যে ১২টি এবং আজ সকাল নাগাদ তিনটি স্টেশন চালু হয়েছে। শুধু দাকোপের দুটি স্টেশনে এখনো সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়নি। ঘণ্টা দু-একের মধ্যে সেখানেও সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
দাকোপের চালনা পৌরসভার আনন্দনগর এলাকার বাসিন্দা মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, দুই দিন পর আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। ঘণ্টাখানেক পর আবার চলে গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬৮টি ইউনিয়ন, ২টি পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের ২টি ওয়ার্ড এলাকায় রিমালের প্রভাব পড়েছে। এতে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার। ১ লাখ ৩৩ হাজার লোককে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছিল।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ার–জলোচ্ছ্বাসে খুলনার দাকোপ ও কয়রা উপজেলার পাঁচটি স্থান ভেঙে গেছে। পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ না ভাঙলেও উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। দাকোপের খলিশা, পানখালি, বটবুনিয়া ও কামিনিবাসিয়া এবং কয়রার দশালিয়া বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে জেলার ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শঙ্কা থাকলেও কয়রায় বাঁধের ক্ষতি কম
যেকোনো বড় ঝড় এলে কয়রা উপকূলের মানুষের বড় ভয় বেড়িবাঁধ নিয়ে। পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, রোববার রাতে জোয়ারের পানি বেড়েছিল ৫ থেকে ৬ ফুট। এ কারণে সোমবার ভোরে ১৭টি স্থানে বাঁধ উপচে ও পানির চাপে দুটি স্থানের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। গতকাল দুপুরেও জোয়ারের পানি বেড়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ ফুট। বিকেল থেকেই স্থানীয় মানুষের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছে। অন্যদিকে রাতের জোয়ারে পানির উচ্চতা আরও কমে গিয়েছিল। এ কারণে বাঁধের আর কোনো ক্ষতি হয়নি।
চারপাশে নদী দিয়ে ঘেরা কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ আছে ১৫৫ কিলোমিটারের মতো। এর আগে আইলা, সিডর, বুলবুল ও আম্পান, ইয়াসে উপজেলার ব্যাপক ক্ষতি হয় ওই উপজেলায়। সেই তুলনায় ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে বলছেন কয়রার বাসিন্দারা।
খুলনা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুহম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, গত রাতে জোয়ারের পানি খুব বেশি বাড়েনি। এ কারণে আর নতুন করে বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।
কয়রা আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুল বান্না আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, মূল ঝড়ের ভয় আর নেই। তবে মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেত কমানো হয়নি। এখনো ৩ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত রয়েছে। জোয়ারের পানি আর আগের মতো বাড়বে না।