ফেলে যাওয়া দুই রোগীর খোঁজ নিচ্ছে না কেউ 

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধ ও যুবক। তাঁদের খোঁজ নিতে আসছে না কেউ
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সার্জারি ও অর্থোপেডিকস বিভাগের ওয়ার্ডের বাইরে মেঝেতে চিকিৎসাধীন সত্তরোর্ধ্ব রোগাক্রান্ত বৃদ্ধ। তাঁর পাশে মেঝেতে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সের যুবকও চিকিৎসাধীন। ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বৃদ্ধ এবং ওই যুবক নিজেদের নাম ও স্বজনদের পরিচয় বলতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে থাকলেও ওই দুই রোগীর স্বজনদের হদিস মিলছে না। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছে তারা। 

হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্টার খাতায় ওই বৃদ্ধের নাম কুদ্দুছ, বয়স ৭৫ বছর। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গজারিয়া গ্রামে। অপর দিকে যুবকের নাম মোশাররফ (৩০) লেখা হয়েছে। তাঁর বাবার নাম লেখা হয়েছে সাজ্জাদ, বাড়ি ময়মনসিংহ। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১৭ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার পাশে ডান পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে কয়েকজন ব্যক্তি ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে রেখে চলে যান। পরে তাঁকে হাসপাতালের সার্জারি ও অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি করা হয়। প্রস্রাব-পায়খানা করায় অন্যান্য রোগীদের আপত্তিতে তাঁকে ওই ওয়ার্ডের কক্ষের বাইরে মেঝেতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসায় তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর স্বজনদের কোনো খোঁজ মেলেনি। 

এদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওই যুবককে রেখে চলে যান কয়েকজন ব্যক্তি। এর পর থেকে তাঁর স্থান হয় ওই বৃদ্ধের পাশে সার্জারি ও অর্থোপেডিকস বিভাগের কক্ষের বাইরের মেঝেতে। তাঁরও স্বজনদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। 

গত মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দেওয়া খাবার খাচ্ছেন দুই রোগী। এ সময় তাঁদের নাম ও পরিচয় জানতে চাইলে শুধু অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে অসংলগ্ন দুয়েকটি কথা বলেন। 

এ বিষয়ে ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ নার্স ঝর্ণা দাস বলেন, ওই দুই রোগী মানসিক ভারসাম্যহীন। নাম ও পরিচয় বলতে পারেন না। হাসপাতালে রেখে যাওয়া লোকজনের কাছ থেকে জানা তাঁদের নাম ও পরিচয়ই রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। দীর্ঘদিন ওই দুই রোগীকে দেখভাল এবং স্বজনদের খোঁজ না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। তিনি বলেন, এত দিনেও ওই দুই রোগীর কোনো আত্মীয়স্বজন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এতে তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। 

এ বিষয়ে সদর থানার ওসি আবদুর রউফ সরকার বলেন, দুই রোগীর স্বজনদের পরিচয় ও ঠিকানা সংগ্রহে চেষ্টা চলছে। পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।