সিলেটে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, শনাক্ত হননি হামলাকারীরা

সিলেটে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা সভা করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় সারদা হলে
ছবি : প্রথম আলো

সিলেটে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মহানগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ মামলা হয়। এতে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। কারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, পুলিশ তা খুঁজে বের করছে। এ জন্য পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। বিষয়টা তদন্তাধীন রয়েছে।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে পাঁচটার দিকে সিলেটের সারদা হলে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির রোডমার্চ ও সমাবেশে যোগ দিতে আসা কয়েকজন নেতা-কর্মী সারদা হলে ঢুকে নারী সংস্কৃতিকর্মীসহ উপস্থিত নাট্যকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এতে বাধা দিলে কয়েকজন নেতা-কর্মী দলবদ্ধ হয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলা চালান। এতে অন্তত ১০ জন সংস্কৃতিকর্মী আহত হন।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত বাদী হয়ে মামলা করেন। অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আজ বেলা ১১টার দিকে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে সারদা হলে সিলেটের প্রতিনিধিত্বশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে জরুরি সভা হয়। এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই স্থানে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সিলেটের সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করতে সভা ডাকা হয়। এতে অন্তত ২০০ সাংস্কৃতিক কর্মী অংশ নেন।

সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীদের সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আবৃত্তিশিল্পী মোকাদ্দেস বাবুল। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অরিন্দম দত্ত, আল আজাদ, বিভাষ শ্যাম পুরকায়স্থ, গৌতম চক্রবর্তী, অনুপ কুমার দেব, চম্পক সরকার, শামসুল বাসিত, অর্ধেন্দু দাশ, রজতকান্তি গুপ্ত, নীলাঞ্জনা জুঁই প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সভা থেকে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সংস্কৃতিকর্মীরা মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় যান। সেখানে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত বাদী হয়ে মামলা করেন।

নাট্যসংগঠক রজতকান্তি গুপ্ত প্রথম আলোকে জানান, ঘটনার প্রতিবাদে আগামী রোববার নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালিত হবে। এর আগে বেলা তিনটায় সারদা হলে সংস্কৃতিকর্মীরা জমায়েত হয়ে বিকেল চারটায় নগরে মৌন মিছিল করে শহীদ মিনারে মিলিত হবে।

এদিকে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি কিশোর কুমার কর ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ সারোয়ার সবুজ প্রমুখ রয়েছেন।