অন্নদার প্রাঙ্গণে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ উৎসব
ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী আলামিন বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়েছেন ১৯৮৮ সালে। অনেক বছর পর বিদ্যালয়ে বাল্যকালের বন্ধু আল মামুনের সঙ্গে দেখা। দেখা হতেই কুশল বিনিময় শুরু হয়। চলে আলাপচারিতা, হয় পারিবারিক ও কর্মস্থলের গল্প। তাঁরা যেন ফিরে যান বিদ্যালয়জীবনে।
আল মামুন বলেন, ‘ঢাকায় পড়ার সময় ১৯৮৯ সালে আমার বন্ধু আলামিনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এর প্রায় ৩৪ বছর পর অন্নদার ঈদ উৎসবে আমাদের দেখা হলো। এই আনন্দ শব্দের ব্যাখ্যা করা যাবে না।’
এ চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণের। গতকাল শুক্রবার সেখানে অনুষ্ঠিত হয় ‘অন্নদা ঈদ উৎসব ২০২৪’। বিদ্যালয়ের ১৯৫৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা।
অনুষ্ঠানের এবারের স্লোগান ছিল, ‘আমরা অন্নদিয়ান, গাই আলোর জয়গান’। বিদ্যালয় চত্বরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন দি কালচারাল পার্টিকেলের সদস্যরা। এরপর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও গীতা পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ সময় তাঁকে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন আবেশ সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেই লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে অন্নদা স্কুলে একটি ১০ তলা অট্টালিকার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলের উন্নয়নের বিষয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি।’
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আবেশের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক লে. জেনারেল সাজ্জাদুল হক, সভাপতি গ্রুপ ক্যাপ্টেন ছাগির আহমেদ ও অন্নদা ঈদ উৎসবের আহ্বায়ক চিকিৎসক আবু সাঈদ। আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজনীন, আবেশের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইমাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, অন্নদা ঈদ উৎসবের সদস্যসচিব আল মামুন প্রমুখ। আবেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
বেলা তিনটা থেকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিদ্যালয় মাঠে দাঁড়িয়ে ২০০১ সালের এসএসসি ব্যাচের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক এ ইউ এম মান্না ভূঁইয়া। দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর পর তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা।
মান্না ভূঁইয়া বলেন, অনেক বন্ধুর সঙ্গে এই ঈদ আড্ডার অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঈদের আগের দিন এবং ঈদের দিন অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছেন। একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় হয়েছে। আয়োজকদের ধন্যবাদ।
১৯৯৩ সালের শিক্ষার্থী মাতিন আহমেদ বলেন, অনুষ্ঠানে ১৯৫৭ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থী আইনজীবী এ কে সামসু উদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। যিনি সবার চেয়ে প্রবীণ। এমন অনেক বাবা–ছেলে এসেছেন, যাঁরা এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এ এক দারুণ অনুভূতি।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল অতিথি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ও শুভেচ্ছাবিনিময়। দ্বিতীয় পর্বে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। তৃতীয় পর্বে রাতে ডিপ্লোম্যাটিক জোন ব্যান্ড দলের সদস্যরা সংগীত পরিবেশন করেন। পরে র্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
অন্নদা ঈদ উৎসবের আহ্বায়ক চিকিৎসক আবু সাঈদ জানান, ১৯৫৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যাচের প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। সবাই শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছিলেন।