ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলের চিকিৎসা কীভাবে করাবেন, জানেন না দিনমজুর বাবা

ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত আল আমিন। রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেছবি : সংগৃহীত

দুই মাস আগে আল আমিনের দাঁতের গোড়া ফুলে যায়, সেখানে ঘায়ের মতো দেখা দেয়। পরবর্তীকালে পরীক্ষায় তাঁর ‘ব্লাড ক্যানসার’ ধরা পড়ে। চিকিৎসায় এরই মধ্যে খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ২০ বছর বয়সী আল আমিন যথাযথ চিকিৎসায় সেরে উঠবেন বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। লাগবে পাঁচ লাখ টাকার মতো। কিন্তু দিনমজুর বাবা এত টাকা জোগাড় করবেন কীভাবে?

আল আমিনের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার প্রধানপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। বাবা শাহিনুর পেশায় দিনমজুর। নিজের কোনো জমিজমা নেই। পরিবার নিয়ে থাকেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাওয়া একটি ঘরে। প্রায় দুই মাস আগে তাঁর বড় ছেলে আল আমিনের ব্লাড ক্যানসার শনাক্ত হয়।

রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আল আমিনের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা গরু বিক্রি করে নিজেরা জোগাড় করেছেন। বাকি এক লাখ টাকাই মানুষের কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে।

বাবা শাহিনুর প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক বলেছেন, আল আমিনের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। চিকিৎসা করাতে পারলে তাঁর সুস্থ হওয়া সম্ভব। এতে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা কোথা থেকে আসবে? এ নিয়ে চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।

শাহিনুরের তিন সন্তানের মধ্যে আল আমিন সবার বড়। দুই মাস আগে আল আমিনের দাঁতের গোড়া ফুলে যায়, ঘায়ের মতো নানা উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর তাঁকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তাঁর জটিল এই ব্যাধি ধরা পড়ে। পরে সেখান থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর তাঁকে রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালে আনা হয়।

যখন ছেলের ক্যানসার শনাক্ত হয়, তখন কোনো টাকা ছিল না বলে জানান শাহিনুর। তিনি বলেন, তখন একটি গাভি ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এক ব্যক্তি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গাভিটি কিনে লালনপালন করার জন্য দিয়েছিলেন। বিক্রির পর গাভির মূল দাম, ২০ হাজার টাকা লাভসহ মোট ৭০ হাজার টাকা সেই ব্যক্তিকে ফেরত দেন তিনি। বাকি ২০ হাজার টাকা ছেলের চিকিৎসায় খরচ করেন। পরীক্ষা ও চিকিৎসায় এই টাকা খরচ হয়ে গেলে স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজন মিলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে টাকা তুলে ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শাহিনুর বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য এখনো অনেক টাকা প্রয়োজন। মানুষের সহযোগিতা ছাড়া ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব নয়।