কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসটিতে মাঝরাতে ডাকাতি শুরু হওয়ার সময় এক যাত্রী জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ কল করার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় ওই যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে দ্রুত সবার মুঠোফোন কেড়ে নেন ডাকাতেরা।
শুক্রবার দুপুরে ওই ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দেন বাসটির যাত্রী আলী হাসান (২৮)। তিনি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিয়াঘাট গ্রামের একজন খামারি।
আলী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে গুরুদাসপুরের কাছিকাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে ঈগল পরিবহনের বাসটিতে ওঠেন তিনি। একপর্যায়ে রাত ১টার দিকে যমুনা সেতু সড়কে পরপর তিন দফায় বাস থামিয়ে ১০ থেকে ১২ জন তরুণ (২০ থেকে ২২ বছর বয়সী) উঠে পেছনের আসনে গিয়ে বসেন। এর পরপরই আলী হাসান ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ রাত ১টার দিকে গুঞ্জন শুনে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। দুই আসনের মাঝে দাঁড়িয়ে তরুণদের একজন অন্যজনকে বলেন, আগে সুপারভাইজারকে বেঁধে ফেল। অন্যরা তাৎক্ষণিকভাবে সুপারভাইজারকে বেঁধে ফেলেন এবং চালককে তাঁর আসন থেকে উঠিয়ে তাঁদের একজন গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন।
এ সময় এক যাত্রী তাঁর মুঠোফোন থেকে ৯৯৯ নম্বরে কল করার চেষ্টা করেন জানিয়ে আলী হাসান বলেন, ‘ফোনের আলো জ্বলে উঠতেই ডাকাতদের একজন ওই যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেন এবং অন্যরা তড়িঘড়ি করে সবার মুঠোফোন কেড়ে নেন। বাস তখন টাঙ্গাইলের সড়ক ধরে চলছিল। আমি মাঝের সিটে বসেছিলাম। ডাকাতেরা দ্রুত প্রথমে পুরুষ যাত্রীদের ও পরে নারী যাত্রীদের হাত-মুখ বেঁধে ফেলেন। সবার কাছ থেকে টাকা, ফোন ও অলংকার ছিনিয়ে নেন। আমার কাছ থেকেও ৭০০ টাকা, মুঠোফোন ও একটি এটিএম কার্ড নিয়ে নেন। ভয়ে আমি সবকিছু সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিই।’
একপর্যায়ে এক নারী যাত্রীকে বাসের পেছনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় জানিয়ে আলী হাসান বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়ার পর ডাকাতেরা সবাই পেছনের দিকে যান এবং লুট করা টাকা ও মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এরপর বাসটিকে তাঁরা টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে নিয়ে যান। রাত তিনটার দিকে একটি মসজিদের অদূরে গতি কমিয়ে বাস থেকে নেমে যান তাঁরা। তখন বাসটি সড়কের পাশে কাত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। পরে তিনি জেনেছেন, ওই জায়গাটা মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া এলাকা। এরপর স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা আসেন।
ঘটনার পর আলী হাসান মধুপুর থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। তবে গণমাধ্যমের কারও সঙ্গে কথা বলেননি। বাড়ি ফিরে এসে প্রতিবেশীদের কাছেও ঘটনা জানাননি।
আলী হাসানের বাবা আবদুল কাদের বলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁর ছেলে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এজাহারে আলী হাসানকে সাক্ষী করা হয়েছে।
ঈগল পরিবহনের বাসটি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশী ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের হাত, চোখ, মুখ বেঁধে ফেলে।
যাত্রীদের মুঠোফোন, টাকাসহ মূল্যবান জিনিস লুট করে। এ সময় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। তিন ঘণ্টা বাসটি নিয়ন্ত্রণে রাখার পর মধুপুরে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে গেলে ডাকাতেরা পালিয়ে যান।