আজ রোববার ভোররাত সাড়ে চারটার সময় জাহাজের এবিল সি-ম্যান (নাবিক) মোহাম্মদ সাজ্জাদ ফোন করেন মা শামসাদ বেগমের মুঠোফোনে। সাজ্জাদ বলেন, ‘মা, দোয়া করো। আমরা মুক্ত হয়েছি। এখন আমাদের পাহারা দিয়ে নৌবাহিনীর লোকজন নিয়ে যাচ্ছেন। আমার জন্য, আমার সঙ্গে থাকা সবার জন্য দোয়া করো। যেন দ্রুতই দেশে পৌঁছাতে পারি।’
দীর্ঘ এক মাস পর ছেলের ফোন পেয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন মা। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সবাইকে ডেকে কথাটি জানিয়ে দিলে খুশির বন্যা বয়ে যায়। শামসাদ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে আমার বুকে ফিরে আসবে, আমার আর কিছু দরকার নাই। আমার মনটা শান্ত হয়ে গেল।’
১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এরপর তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। ওই জাহাজের ২৩ জনের মধ্যে আনোয়ারা উপজেলার আরেক নাবিক মোহাম্মদ সাজ্জাদও আছেন।
৩২ দিন পর জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছে এমভি আবদুল্লাহ। সোমালিয়ার সময় আজ দিবাগত রাত ১২টা ৮ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিট) জাহাজটি থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এরপরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় এমভি আবদুল্লাহর দুই পাশে দুটি যুদ্ধজাহাজ পাহারা দিয়ে সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করতে থাকে।
সাজ্জাদ আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর গ্রামের গাজু মিয়ার ছেলে। গাজু মিয়ার পাঁচ ছেলের মধ্যে সাজ্জাদ তৃতীয়। তিনি ১০ বছর ধরে জাহাজে কর্মরত। প্রথমে ডেক ইনচার্জ থাকলেও বছরখানেক আগে তাঁর পদোন্নতি হয়। পদোন্নতির পর বিয়ে ঠিক হয় সাজ্জাদের। এবার জাহাজে ওঠার এক দিন আগে খালাতো বোন নাজমিন আক্তারের সঙ্গে সাজ্জাদের কাবিন সম্পন্ন হয়। এবার এলে ঘটা করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারার কথা আছে।
সাজ্জাদের ভাই মোশাররফ মিয়া বলেন, ‘এক মাস ধরে আমরা খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম ভাইকে ফিরে পাব কি না, এমন সন্দেহে। কিন্তু গত রাতে তাদের মুক্তির পাশাপাশি মায়ের মুঠোফোনে কথা বলায় আমরা স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছি।’
সাজ্জাদের বাবা গাজু মিয়া বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল যে ছেলেকে ফিরে পাব। এখন তা সত্য হয়েছে। এখন ছেলের অপেক্ষায় আছি। সে এলে ঘটা করে বিয়ে দেব।’