বন বিভাগে জমা রাখা তিনটি রাসেলস ভাইপারের জন্য পুরস্কারের টাকা দেবে আ.লীগ

ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকায় আটক রাসেলস ভাইপার নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে কৃষক রেজাউল খান। গত শনিবার রাতে
ছবি: প্রথম আলো

নানা বিতর্কের পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ রাসেলস ভাইপার সাপ ধরে আনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু এর আগেই পুরস্কারের আশায় জীবিত সাপ নিয়ে হাজির হন তিনজন। ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া ওই সাপগুলো আজ সোমবার খুলনায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করার আগে যে তিনজন সাপ এনে জমা দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক।

আজ বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে সাপ তিনটি পৌঁছে দেন ফরিদপুর বন বিভাগের প্রহরী মো. জাহিদুল ইসলাম। সাপগুলো বুঝে নেন ওই কার্যালয়ের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য।

তন্ময় আচার্য বলেন, যে তিনটি রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা ফরিদপুর বন বিভাগ থেকে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে একটি ইতিমধ্যে মারা গেছে। আরেকটি মৃতপ্রায়, সেটির বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। শুধু একটি সুস্থভাবে বেঁচে আছে। জীবিত সাপটির ব্যাপারে বন বিভাগ, খুলনা ও ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলেন, ২০ জুন বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে প্রথমে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। এ নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় ২১ জুন জেলা আওয়ামী লীগ ওই ঘোষণা থেকে কিছুটা সরে এসে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে বলা হয়, নিজে সুরক্ষিত থেকে জীবিত রাসেলস ভাইপার ধরে বন বিভাগে জমা দিলে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের এই সংশোধিত ঘোষণাও ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী।

আরও পড়ুন

জেলা আওয়ামী লীগের এ ঘোষণার পর রাসেলস ভাইপার জীবিত ধরার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় ফরিদপুর সদরের নানা গ্রামে। ফরিদপুর বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ে তিনটি জীবিত রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা জমা দেন ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ও আলীয়াবাদ ইউনিয়নের তিন ব্যক্তি।

এ নিয়ে নানা সমালোচনার পর গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় জেলা আওয়ামী লীগ। ঘোষণায় বলা হয়, ২০ জুন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার–সম্পর্কিত একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যা প্রকৃতপক্ষে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। বিষয়টি বন ও পরিবেশ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ সর্বসম্মতভাবে রাসেল ভাইপারসংক্রান্ত ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

আরও পড়ুন

ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সরীসৃপজাতীয় প্রাণী ধরা বা মারা আইনত দণ্ডনীয়। সে আইন অনুযায়ী, এভাবে সাপ ধরা বেআইনি। এভাবে ধরা সাপ তাঁরা জমা রাখতে বা প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দিতে পারেন না। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কথায় তাঁদের সাপ জমা নিতে হয়েছে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথায় প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দিতে হয়েছে।

গতকাল ফরিদপুর বন বিভাগের কার্যালয়ে তিনটি রাসেল ভাইপারের বাচ্চা জমা দেন ফরিদপুর সদরের রেজাউল করিম, আজাদ শেখ ও শাহজাহান খান। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক বলেন, ‘সাপ–সম্পর্কিত ঘোষণাটি আমরা প্রত্যাহার করেছি গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায়। ওই তিনটি সাপ এর আগেই বন বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী অনতিবিলম্বে ওই তিন ব্যক্তিকে পুরস্কার বাবদ ৫০ হাজার করে টাকা দেব।’

আরও পড়ুন