ধরপাকড়ে বিএনপিতে আতঙ্ক

তল্লাশির নামে দলটির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিলেটে গত পাঁচ দিনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। একইভাবে খুলনায় গত সাত দিনে বিএনপির অন্তত ৫৫ নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তল্লাশির নামে দলটির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার অভিযোগে পুলিশ এই ধরপাকড় ও তল্লাশি শুরু করেছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাদের।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, দলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানানো হয়েছে। কোনো ধরনের উসকানি ছাড়া পুলিশ এসব অহিংস কর্মসূচিতে গুলি চালিয়েছে। এখন আবার উল্টো বিভিন্ন মামলায় দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে সংঘর্ষ-ভাঙচুর হয়েছে, এর কোনোটির সঙ্গেই বিএনপি কিংবা সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কোনো যোগসূত্র নেই। অথচ এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীদের বাসাবাড়িতে গিয়ে পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি চালাচ্ছে।

তবে এ অভিযোগের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে দাবি করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সিলেটে বিএনপির-জামায়াতের যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, কেবল তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। কোনো নিরীহ ও নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। এ ছাড়া পুরোনো মামলায় পরোয়ানাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান সহিংসতার অভিযোগে সিলেট মহানগরের তিনটি থানায় মোট আটটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ১৫১ জন। এর বাইরে অন্তত সাড়ে ১৫ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ১০৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আফসর খান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব (জুবায়ের), সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল শাহজাহান আলী ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রব উল্লেখযোগ্য। 

মহানগর পুলিশের দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় তিনটি, জালালাবাদ থানায় চারটি ও দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া মহানগরের মোগলাবাজার থানা ও শাহপরান (রহ.) থানায় পুরোনো মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ১৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে সিলেট জেলার জৈন্তাপুরে গত শুক্রবার এবং কানাইঘাটে গত শনিবার পুলিশ দুটি মামলা করেছে। এসব মামলায় ১২ জন গ্রেপ্তার হন। তাঁরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা) সম্রাট তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাশকতার সঙ্গে যাঁরাই জড়িত ছিলেন, তাঁদেরকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

খুলনায় ১৬–২২ জুলাই বিএনপির অন্তত ৫৫ নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের বেশির ভাগই পুরোনো নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে সম্প্রতি নগরের তিনটি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে হওয়া তিনটি নতুন মামলায়ও অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা জানান, গত কয়েক দিনে নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইসতিয়াক আহম্মেদ, নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহীদ খান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনসার আলী, নগর কৃষক দলের আহ্বায়ক সজীব তালুকদার, জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুম বিল্যাহ, সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির জে৵ষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মির্জা মাহমুদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা–কর্মী।

গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার কয়েকবার চেষ্টা করলেও নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম (মনা) ও সদস্যসচিব শফিকুল আলমের (তুহিন) মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নগর বিএনপির একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য নেতারা বিকল্প মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করছেন। তাঁরা আমাদের নম্বর দিয়েছেন। আমরা যোগাযোগ করতে পারছি। যেসব কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি, তাঁরাও বিকল্প নম্বর ব্যবহার করছেন।’

খুলনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ গ্রেপ্তার করছে আমাদের নেতা–কর্মীদের। বিএনপি তো এই আন্দোলন করছে না। অথচ পুলিশ নেতা–কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছে। জেলা বিএনপির সাত-আটজন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতা–কর্মীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক–উৎকণ্ঠা কাজ করছে।’

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, এই কয়েক দিনে মোট ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা সহিংস আন্দোলনের উসকানিদাতা। কোটা সংস্কার দাবির আড়ালে তাঁরা নাশকতা করেছেন।