ট্রেন বন্ধে ৯ দিনে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আয় কমেছে ১১ কোটি টাকা

যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় করে। বর্তমানে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় রেল কর্তৃপক্ষ এই আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গতকাল শনিবার পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনেছবি: হাসান মাহমুদ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। এতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে অবস্থিত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সদর দপ্তরের প্রতিদিন প্রায় সোয়া কোটি টাকা আয় কমেছে। গত ৯ দিনে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১১ কোটি টাকা আয় কম হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান রেলওয়ের এই কর্মকর্তা।

গত কয়েক দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেনযাত্রীরা। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেশি ভাড়া দিয়ে সড়কপথে চলাচল করছেন তাঁরা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে পাকশী রেলওয়ে সদর দপ্তর গঠিত। প্রতিদিন এই দপ্তরের আওতায় ১০৭টি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ঢাকা-কলকাতা রুটে ৮টি, আন্তনগর ৫৬টি, মেইল ৩১টি ও ১২টি লোকাল ট্রেন আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রুটে মালামাল বহনের জন্য ১২টি মালবাহী ট্রেন আছে। যাত্রীবাহী ও মালবাহী এসব ট্রেন থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় করে। বর্তমানে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় রেল কর্তৃপক্ষ এই আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বলেন, নাশকতার আশঙ্কায় ১৯ জুলাই রাত থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ২০ জুলাই সকাল থেকে পর্যায়ক্রমে সব ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। তবে গত মঙ্গলবার থেকে কড়া নিরাপত্তায় সীমিত পরিসরে মালবাহী ট্রেন চালানো হচ্ছে।

গতকাল শনিবার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনটি অনেকটাই জনশূন্য। কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়া প্ল্যাটফর্মে আর কেউ নেই। স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আছে ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। অন্য প্ল্যাটফর্মসহ স্টেশনজুড়ে কয়েকটি ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশীর বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, ট্রেন বন্ধ রাখার ঘোষণা হওয়ার পর যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো বিভিন্ন গন্তব্যে আটকে যায়। বর্তমানে ট্রেনগুলো কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। তবে পাকশী বিভাগ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত আছে। নির্দেশনা এলেই ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়েতে সেবার মান বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরাও দুর্ভোগে আছেন। তাঁরা কষ্ট করে চলাচল করছেন। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েরও প্রায় সোয়া কোটি টাকা আয় কমেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। আশা করছি খুব শিগগির দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। সে ক্ষেত্রে ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’