স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, দীর্ঘ যানজট

স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে শাহজাদপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহজাদপুর পৌর শহরে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কেছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্থায়ী ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহজাদপুর পৌর শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-৩-এর সামনে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে তাঁরা প্রথমে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

দীর্ঘ সময় মহাসড়ক বন্ধ থাকায় উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। পরে বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম হাসান তালুকদারের অনুরোধে মহাসড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান ও তাইবুর রহমান; সংগীত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় সরকার, পিয়াস, মওদুদ আহমেদ ও মিরাজ হোসেন; অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি থাকলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে সবাই দুর্নীতি ও নিয়োগ–বাণিজ্যে ব্যস্ত ছিল। প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল নির্মাণ করা হয়নি। উল্টো শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও মাওলানা সাইফুদ্দিন কলেজে অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হল না থাকায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছেন। এতে তাঁরা নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে তাঁদের একটাই দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে হবে। অচিরেই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে উদ্যোগ না নিলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে দীর্ঘ সময় মহাসড়ক বন্ধ থাকায় উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে শাহজাদপুর পৌর শহরে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে
ছবি: প্রথম আলো

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাসড়কের পাশে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করছিলাম। হঠাৎ শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেলা দুইটা পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সেখানে আসেন। কিন্তু দাবির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কিছু না বলায় এটি আরও দীর্ঘায়িত হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সুমন কান্তি বড়ুয়া ও কোষাধ্যক্ষ ফিরোজ আহমেদ এসে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। পরে বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সমন্বয়ক ও বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মহাসড়কে আলোচনা শুরু করেন।

বেলা তিনটার দিকে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ না করতে শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। এ ব্যাপারে তাঁরা প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। আশা করছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁরা মহাসড়ক ছেড়ে দেবেন।’

জানতে চাইলে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখায় দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সন্ধ্যার দিকে তিনি বলেন, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা মহাসড়কটি ছেড়ে দিয়েছেন।

একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার

এদিকে বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম হাসান তালুকদারের অনুরোধে মহাসড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি একাডেমিক ভবনে তালা দিলে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন। পরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

উপাচার্য এস এম হাসান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে তিনি একাত্মতা ঘোষণা করেন। তবে দাবি আদায়ে যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয়, সে জন্য মহাসড়ক ছেড়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার আহ্বান জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন।

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে গত আট বছরে এ পর্যন্ত সাত থেকে আটবার প্রকল্প বাজেট পর্যালোচনা করে কমানো হয়েছে। শুরুতে প্রস্তাবিত ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা থেকে বাদ দিয়ে এখন প্রায় ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে আজ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে শিক্ষা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৮ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের সভায় প্রস্তাবনাটি অনুমোদনের কথা আছে।