শিক্ষকতার পাশাপাশি ফেসবুকে আম বিক্রি করেন তরুণ
কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতার আয় দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। বিকল্প আয়ের চিন্তা থেকেই শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা। ফেসবুকে নিজের আইডির মাধ্যমে শুরু করেন আম বিক্রি। অনলাইনে আম বিক্রির মাধ্যমে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ওস্তাপাড়া গ্রামের তরুণ নেজাম উদ্দিন (২৫)।
খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করেন নেজাম উদ্দিন। এই মৌসুমে আম বিক্রি করে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। ওস্তাপাড়া গ্রামে বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘নবম শ্রেণি থেকে টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালাতাম। ২০১৭ সালে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি। ২০২১ সালে রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিবিএস পাস করি। কিন্তু শিক্ষকতার স্বল্প আয়ে স্ত্রী ও এক সন্তানের পরিবারের খরচ চালাতে কষ্ট হতো। চাকরির পাশাপাশি টিউশনি করেও খুব একটা লাভ হতো না। ২০২১ সালে টিউশনির জমানো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করি আমের ব্যবসা। প্রথমবারেই প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়। পরের বছর থেকে গ্রাহক বাড়তে থাকে। এই মৌসুমের শুরুতেই ৩০০ কেজি আম বিক্রি করেছি।’
রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও রাউজান, কাপ্তাই, চট্টগ্রাম শহর ও ঢাকায় ফেসবুকের মাধ্যমে আম বিক্রি করেন নেজাম। তাঁর ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধি। বাগান থেকে আম সংগ্রহ ও মোড়কজাতের ছবি ও ভিডিও নিজের আইডিতে আপলোড করেন তিনি। এরপর গ্রাহকের চাহিদামতো নিজে বাইকে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন পণ্য। বাজারদরে আম বিক্রি করেন বলে তাঁর গ্রাহক বেশি বলে জানান নেজাম। কেউ অনেক বেশি আম একসঙ্গে নিলে মূল্যছাড়ও দেন তিনি।
আম বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আলাদা কোনো টাকা নেন না নেজাম। তিনি বলেন, এ বছরের শুরুতে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনলাইন ব্যবসাবিষয়ক স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ নেন তিনি। পরে তাঁরা ৪০ হাজার টাকা ঋণ দেন। কারবাইড দিয়ে আমের রং হলুদ করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফরমালিন ব্যবহার করে দীর্ঘদিন আম সংরক্ষণ করেন। নেজামের ক্রেতারা গাছ ভাঙা থেকে শুরু করে প্যাকেট করা পর্যন্ত সবটা ভিডিওতে দেখতে পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, নেজাম একজন উদ্যমী ও কর্মঠ তরুণ। তাঁর মতো যুবকেরা অনলাইনে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। তিনি যুব উন্নয়ন কার্যালয় থেকে অনলাইন ব্যবসাবিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। পরিশোধ করলে আরও বেশি ঋণ ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা পাবেন তিনি।