বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা থামছেই না। টানা ১১ দিন ধরে ওপারের মংডু টাউনশিপ ও আশপাশের গ্রাম থেকে ভারী গোলার বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাতের বেলায় বিকট শব্দের শক্তিশালী বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কুলালপাড়া, ডেইলপাড়া, হাঙ্গারডেইলসহ অন্তত ১৩টি গ্রাম।
সীমান্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইনে সীমান্তচৌকি দখল ও পুনরুদ্ধারের ঘটনায় এক মাসের বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সীমান্তচৌকি ও ফাঁড়ি দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এ ছাড়া রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিথুয়ে (আকিয়াব) টাউনশিপে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা। এ কারণে ছয় দিন ধরে সিথুয়ের বন্দরের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানির সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে পড়েছে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর ভারী অস্ত্রশস্ত্র সাধারণ লোকজনের হাতে চলে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব অস্ত্রশস্ত্র হাতবদল হয়ে টেকনাফ কিংবা উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে গেলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।
রাখাইন রাজ্যের চলমান যুদ্ধপরিস্থিতিতে টেকনাফ ও উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নের অন্তত ২১ হাজার মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নাফ নদীতে মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ বন্ধ। নদীতীরের জমিতে ধান-শাকসবজির চাষ ও লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, এপারের বিপুলসংখ্যক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে নেতিবাচক পরিস্থিতির শিকার হলেও তাঁদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছেন না। মর্টার শেলের বিকট শব্দ এবং এপারে গুলি এসে পড়ার শঙ্কায় সীমান্তঘেঁষা ২১টি গ্রামের মানুষজনের স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে।
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।