মানববন্ধনে কাঁদলেন স্ত্রী, আসামিসহ ইন্ধনদাতাদের বিচার দাবি

কুষ্টিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহতের ঘটনায় মানববন্ধনে বিচার চেয়ে কাঁদলেন স্ত্রী বীথি রানী দে। শনিবার বেলা ১১টায় ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় হামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক নিহতের ঘটনায় বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে সঞ্জয়ের স্ত্রী বীথি রানী দে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর স্বামী হত্যার বিচার চান। পাশাপাশি হামলার ঘটনায় ইন্ধনদাতাদেরও শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ভেড়ামারা উপজেলা শাখা। মানববন্ধনে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। বীথি রানী দে সেখানে প্রায় আট মিনিট বক্তব্য দেন। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আরও পড়ুন

বীথি রানী দে বলেন, ‘আমার স্বামী তো কারও কোনো ক্ষতি করে নাই। তাঁকে তো সবাই ভালোবাসতেন। তারপরও কেন আমার স্বামীর সঙ্গে এমনটা করল। কেন এমন হইল। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত শোভন, ইয়ামিন, প্রত্যাশা, সাব্বির, জয়—সবার বিচার চাই। তাদের যেন কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি হয়। আমার জীবন থেকে যা চলে গেছে, তাদের জীবন থেকে যেন সবকিছু হারায়।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বীথি রানী বলেন, ‘আমার তো সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। কী এমন হলো মারামারির পর্যায়ে চলে গেল। কেউ কিছু করতে পারল না। প্রশাসন কি জানত না।’ প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু প্রশাসনের দোষ। তারা নিজেরা ইচ্ছা করে আমার স্বামীরে মারছে। যারা এই দলের (যুবজোট) নেতা আছে, তারা সবকিছুতে জড়িত ছিল। আমি তাদের নাম বলব না। ওরা ইচ্ছা করেই আমার স্বামীর সঙ্গে এমন করছে। আমি সবকিছুর বিচার চাই। সবার ফাঁসি চাই।’

আরও পড়ুন

হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়ে বীথি রানী দে বলেন, ‘যে অস্ত্র দিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, সেই অস্ত্র উদ্ধার দেখতে চাই। এই মানববন্ধন, সান্ত্বনা আমার প্রয়োজন নাই। আমার স্বামী সবার জন্য ছিল, আজ তাঁর জন্য কেউ নাই। নেতারা যারা ইন্ধন জোগায়ছে, তাদেরও শাস্তি চাই। আমি কাউকে ছাড় দিতে চাই না। সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

মানববন্ধনে নিহত সঞ্জয়ের ছোট ভাই সম্পদ কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে ভাইয়ের সাথে যুবজোট নেতা মোস্তাফিজুরের বিরোধ চলে আসছিল। সেটা প্রশাসনসহ সবাই জানত। সবাই জানার পরও কেন তাঁকে মরতে হলো। আমার হাতের ওপর ভাই মারা গেল। প্রধান অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের কঠিন শাস্তি চাই।’

আরও পড়ুন

মানববন্ধনের একপর্যায়ে ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম উপস্থিত হয়ে একাত্মতা পোষণ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়দেব বিশ্বাস, সঞ্জয়ের বাবা দুলাল প্রামাণিকও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।

২ আগস্ট রাতে ভেড়ামারা উপজেলা খাদ্যগুদাম এলাকায় পূর্ববিরোধের জেরে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকসহ (৩৭) তিনজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত সঞ্জয় ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার মারা যান। হামলার ঘটনায় সঞ্জয়ের স্ত্রী বীথি রানী দে বাদী হয়ে যুবজোট নেতা মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ভেড়ামারা থানায় মামলা করেন। মোস্তাফিজসহ পাঁচ আসামি বর্তমানে কারাগারে। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পরপরই ভেড়ামারা শহরে তাণ্ডব চালান আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন