ভালোবেসে বাংলাদেশে থেকে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার সেই চিত্রশিল্পী মারা গেছেন
ভালোবাসার টানে দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশে বসবাস করা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক চিত্রশিল্পী ম্যালকম আরনল্ড মারা গেছেন। আজ বুধবার সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায় ভাড়াবাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ম্যালকমের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। একই সঙ্গে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়। হাইকমিশন থেকে তাঁর লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁর লাশ নগরের বসুপাড়া কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
ম্যালকমের স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাতের খাবার ও ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ম্যালকম। সকালে ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনে দৌড়ে যান। তখন তিনি মুখের স্প্রে দিতে বলেন। স্প্রে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ম্যালকম নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতা ছিল ম্যালকমের।
হালিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন ম্যালকম। তাঁর (হালিমা) জন্য ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর পরিবার আছে। অনেকবার তাঁকে (ম্যালকম) অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি ফিরে যাননি।
২০২১ সালের ২০ নভেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘বাংলাদেশে যেমন আছেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যালকম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ম্যালকম ও হালিমার সংগ্রামের চিত্র উঠে আসে। শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি তুলে ধরা হয় ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাসরত ম্যালকমের জীবনের গল্প।
ম্যালকম আরনল্ডের গল্প একেবারে সাদা কাগজের মতো নীরস নয়। অস্ট্রেলিয়ার এই নাগরিক ২০০৪ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে ছিলেন। এ দেশে তাঁর নাগরিকত্ব ছিল না। বছর বছর ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বাংলাদেশে থেকেছেন। এর আগে ভিড়বাট্টা এড়াতে বছর দশেক পাহাড়ে উঠে বসেছিলেন। তা-ও বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে নয়, অস্ট্রেলিয়ায়। তারও আগে যুবক বয়সেই তিতিবিরক্ত হয়ে চাকরি ছেড়েছিলেন শুধু ছবি আঁকবেন বলে।
সেই ম্যালকম নানা পথ ঘুরে ১৮ বছর ধরে খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায় সবুজ রঙের দেয়ালের একটি ঘরে ছিলেন। যেখানে দিন–রাত কোলাহলই ছিল তাঁর জীবন। বাগেরহাটের রামপালের পেড়িখালী গ্রামের হালিমা বেগমকে ভালোবেসে তিনি খুলনায় থেকে গিয়েছিলেন।