ঝিকরগাছায় চাঁদা না পেয়ে সরকারি চাল লুট, ‘হুমকির মুখে’ মামলার ১ নম্বর আসামির নাম পরিবর্তন
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রায় ১০ হাজার কেজি চাল লুট করা হয়েছে। দুই লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে গত সোমবার দুপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক হাসান আলীর গুদাম থেকে এ চাল লুট করা হয়। এ বিষয়ে আজ বুধবার দুপুরে ঝিকরগাছা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী হাসান আলী বাদী হয়ে এজাহারে ১৯ জনের নাম-পরিচয় উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। অভিযোগ উঠেছে, হাসান আলী লিখিত অভিযোগে প্রথমে এক বিএনপি নেতাকে ১ নম্বর আসামি করেন। পরে অব্যাহত হুমকিতে ওই নেতার নাম এজাহারে উল্লেখ করেননি। মামলার বাকি আসামিরা ওই বিএনপি নেতার অনুসারী।
ঝিকরগাছা থানার পরিদর্শক মো. ইব্রাহীম আলী (তদন্ত) বলেন, চাল লুটের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্থানীয় হাফিজুর রহমান, রজব আলী, মো. নাহিদ, মো. মিজান ও মো. ওয়াসিম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক হাসান আলীর গুদামে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই চাঁদা না দেওয়ায় গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে দেশি অস্ত্র নিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন উপজেলার হাড়িয়া নিমতলা এলাকায় অবস্থিত তাঁর গুদামে গিয়ে হামলা করে। এ সময় হামলাকারীরা ৩০ কেজি বস্তার ৩০৫ বস্তা চাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া, নগদ টাকা লুট ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ঘটনার পর পরিবেশক হাসান আলী নাভারণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. খায়রুজ্জামানকে ১ নম্বর আসামি করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর বিএনপি নেতাদের অব্যাহত হুমকি ও চাপের মুখে তিনি খায়রুজ্জামানের নাম বাদ দিয়ে দেন।
এ বিষয়ে হাসান আলীর বক্তব্য জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে আছি। এখানে বিএনপির মধ্যে দুই গ্রুপ রয়েছে। আমি খুব ঝামেলার মধ্যে আছি। আমি আর কিছু বলব না।’ এরপর তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেছেন, তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হতেই পারে। অভিযোগের ওপর তদন্ত করে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তবে চাল লুটের ঘটনায় তিনি জড়িত নন।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, মামলার এজাহারে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা খায়রুজ্জামানের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
মামলার এজাহার থেকে বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামানের নাম বাদ দেওয়া হলো কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ঝিকরগাছা থানার পরিদর্শক মো. ইব্রাহীম আলী (তদন্ত) বলেন, ‘হাসান আলীর কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম, খায়রুজ্জামান ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না? হাসান আলী তখন বলেন, খায়রুজ্জামান ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এ জন্য পরে হাসান আলীই খায়রুজ্জামানের নাম বাদ দিয়েছেন। তবে পুলিশের তদন্তে খায়রুজ্জামানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযোগপত্রে তাঁর নাম যুক্ত করা হবে।’
উপজেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারি গুদাম থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উত্তোলন করা ৫৪৪ বস্তা চালের মধ্যে ৩০৫ বস্তা চাল লুট হয়েছে। অবশিষ্ট ২৩৯ বস্তা চাল পরিবেশক হাসান আলীর গুদামে মজুত রয়েছে।