‘মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা এই সরকারের দায়িত্ব’

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটরিয়ামে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঋণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায়। আজ বেলা ১১টায়ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পায়নি, বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সমাজের অবহেলিত, অসহায়, শ্রমিক-জনতা নেমে এসেছিল স্বৈরাচারকে হটানো জন্য। এবার তাঁরা শোষকদের হাত থেকে মুক্তি চায়। সর্বোপরি জীবনমানের নিরাপত্তার জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি বেশি জরুরি। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে নজর দেওয়া উচিত। আজ সোমবার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঋণ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেছেন বক্তারা।

বেলা ১১টায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটরিয়ামে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক এছাক মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভাটির সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য এ এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সহ–উপাচার্য সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন। এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জুলাই অভ্যুত্থানের স্মরণে ক্যাম্পাসে একটি শোভাযাত্রা করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা।

সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন কবি ও প্রাবন্ধিক আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, শাহজালাল প্রযুক্তি ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজিক মিয়া ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আতিক মুজাহিদ।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘৭১–এর মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা, সাম্য আর সামাজিক ন্যায্যতা—এই তিন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা উঠেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি মিলছে না। দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, তা থামছে না। এই সরকারের উচিত মানুষের এই অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা।’

শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো নীতি নেই উল্লেখ করে আবদুল হাই শিকদার বলেন, ‘স্বাধীনতা পর শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো নীতি গ্রহণ করা হয়নি। ছাত্রনেতাদের বলব, তোমরা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি রূপরেখা নিয়ে কথা বলো। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও আমাদের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা জরুরি। ঘরে ঘরে ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা ঢুকে গেছে। এটি দেশের মধ্যে ভারতীয় কর্তৃত্ব তৈরি করেছে। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে দেশের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি আছে। জুলাই আন্দোলনের এক শ দিন পেরিয়ে গেলেও তা নিয়ে মন্ত্রণালয়টি আমাদের এক শ গান, কবিতা বা নাটক উপহার দিতে পারেনি।’

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘সংবিধানে চারটি মুজিববাদী মূলনীতি ঢোকানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে একটি ধর্ম বানানো হয়েছে। এই আওয়ামী ধর্মের বিলোপ করতে হবে। এই জন্য তরুণদের দায় ও দরদ নিয়ে কাজ করতে হবে। এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় কোনো ‘এ টিম’ কিংবা ‘বি টিম’ বা অন্য কোনো রূপে ফিরে না আসতে পারে—সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি জনতার দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ সংস্কার করতে হবে।’

সভা থেকে ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটিকে (১৬ জুলাই) আন্তর্জাতিক ‘মেধা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান বক্তারা। এ ছাড়া আলোচনা সভায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের যথাযথ পুনর্বাসনব্যবস্থা ও গণহত্যাকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।