আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ: মাওলানা মামুনুল হক

ময়মনসিংহের নান্দাইলের সমাবেশে মামুনুল হককে স্বাগত জানাচ্ছেন খেলাফত যুব মজলিসের সমর্থকেরা। শনিবার বিকেলে শহরের চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেননি বা শহীদ হননি। অথচ তিনি ১৫ বছর ধরে একাত্তরের চেতনার কথা বলে পুরো দেশ ও দেশের মানুষকে বিভক্ত করে গেছেন। এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের তিনি রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন।’

ময়মনসিংহের নান্দাইলে আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামুনুল হক এসব কথা বলেন। শহরের চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ জনসমাবেশ আয়োজন করা হয়। মামুনুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দেশ হিসেবে গত ১৫ বছর ভারতের সম্পর্ক ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে। দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া উপেক্ষা করেছে ভারত। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দিল্লির পরামর্শ নিয়েছেন, তাদের দাসত্ব করেছেন। ক্ষমতা হারিয়ে তিনি সেই পরামর্শদাতার দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।’

কিছুদিন আগে একটি ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মামুনুল হক বলেন, ‘শেখ হাসিনা আবার চট করে দেশে ঢুকে পড়তে চাইছেন। শেখ হাসিনা চট করে ঢুকতে চাইলে দেশের মানুষ তাঁকে কট করে ধরে ফেলবে।’ তিনি শেখ হাসিনাকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘এ দেশে আওয়ামী লীগের শাসন আর চলবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ।’

এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মো. জোবায়ের আহমেদ। এ ছাড়া সংগঠনটির স্থানীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেন।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত আরেকটি সমাবেশেও প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মামুনুল হক। দুই সমাবেশেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।

খেলাফত যুব মজলিসের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মাওলানা মমিনুল হক। শনিবার দুপুরে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

ঈশ্বরগঞ্জে আয়োজিত সমাবেশে মামুনুল হক শিক্ষা কমিশনে নাস্তিক্যবাদীদের সরিয়ে ইসলামি শিক্ষাবিদ ও আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসররা এ দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এ দেশের মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার ছিনতাই করে দেশে একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন। কিন্তু জুলাই ও আগস্টের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছি নতুন কোনো ইসলামবিদ্বেষী শক্তিকে বাংলার মসনদে দেখবার জন্য নয়। ড. ইউনূস সাহেবের সরকারকে আমরা এখন পর্যন্ত সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আগামী দিনেও এই সহযোগিতা করে যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের আছে। কিন্তু সেই ইচ্ছা সরকারেরও থাকতে হবে।’

মামুনুল হক বলেন, ‘যদি হিন্দুত্ববাদী ও ইসলামবিরোধী কোনো এজেন্ডা পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, সেটাকেও আমরা রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত। হিন্দুত্ববাদী শিক্ষাব্যবস্থাকে উৎখাত করার জন্য আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি।’ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা মাথায় আমরা কথা বলছি, আমাদের ভাষা বুঝবার চেষ্টা করেন। সমকামিতা ও অসভ্যতার নোংরামি এই বাংলাদেশে বরদাশত করা হবে না। প্রয়োজনে আবার রক্ত দেব, আবার শহীদ হব।’

ঈশ্বরগঞ্জের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুফতি মাহমুদুল হক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন প্রমুখ।