রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশন চলছে, সংহতি অনেক শিক্ষার্থীর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে সারা রাত অবস্থান করেছেন একদল শিক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আমরণ অনশন শুরু করেন তিনজন শিক্ষার্থী। এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনে অংশ নেন।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় শিক্ষার্থীদের অনশন চলছিল। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠী নন। তারপরও তাঁদের সন্তানদের কেন পোষ্য কোটা প্রয়োজন হবে? বর্তমান প্রশাসন এ ব্যাপারে নানা রকম যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু তাঁদের ন্যায্য দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
গতকাল সন্ধ্যা থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স ও হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মেহেদী মারুফ। তিনি আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল ও আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বেশ কয়েকজন শিক্ষক আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা পোষ্য কোটার বিষয়ে বেশ কিছু যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছি, এখানে প্রশ্ন হচ্ছে ন্যায্যতার। আমাদের দাবি ন্যায্য ও যৌক্তিক। ১ শতাংশ পোষ্য কোটা থাকলেও আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আন্দোলন মঞ্চের সদস্যসচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পোষ্য কোটা চালু হয়েছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেই পোষ্য কোটা বিলুপ্তি করে ইতিহাস কলঙ্কমুক্ত করতে চাই। পোষ্য কোটা থাকবে না এটা একটি মীমাংসিত বিষয়। আজকেই পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা মহোদয়সহ শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন, পোষ্য কোটা না থাকুক। ফলে পোষ্য কোটা থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। একপর্যায়ে তাঁরা আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেন।
প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ভর্তির যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটা ভর্তি কমিটি আছে। এখানে ইনস্টিটিউট, বিভাগীয় প্রধান, ডিন, সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রায় ৯০ জন সদস্য আছেন। কোটার এই সিদ্ধান্ত ভর্তি কমিটিরই সিদ্ধান্ত। উপাচার্য একা একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারেন না। কোনো সিদ্ধান্ত যদি আমরা চাপিয়ে দিই, তবে আমরাও ফ্যাসিস্ট প্রশাসনে পরিণত হব। আমরা কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনার পক্ষে। সবাই মিলে যদি একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সেটি আরও বেশি সুন্দর হয়। আমাদের ছেলেরা যে দাবি করছেন, আমরা তাঁদের সঙ্গে একমত এবং সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’
গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর পর থেকেই শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিন দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে চার ছাত্র সংগঠনের অবস্থান
এদিকে ভর্তি পরীক্ষা, শিক্ষক নিয়োগ, পোষ্য কোটা বাতিলসহ তিন দাবিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল চার ছাত্র সংগঠন। আজ বেলা ১১টা থেকে সংগঠনের সদস্যরা এই কর্মসূচি শুরু করেন। তাদের অন্য দুটি দাবি হলো ভর্তি পরীক্ষায় সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল করা এবং ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্যায্য আবেদন ফি আদায় বন্ধ করতে হবে।
অবস্থান নেওয়া চার ছাত্র সংগঠন হলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র গণমঞ্চ।