৭৫ ঘণ্টা বন্ধ পানি শোধনাগার, ক্ষতি ১ কোটি টাকার বেশি

চট্টগ্রাম ওয়াসার ফুটো হয়ে যাওয়া পাইপ মেরামতে কাজ করছেন কর্মীরা। গতকাল দুপুরে নগরের অনন্যা আবাসিক এলাকায়ছবি: জুয়েল শীল

ফুটো হওয়ার ৭৫ ঘণ্টা বা ৩ দিনের বেশি সময়েও মেরামতকাজ শেষ হয়নি চট্টগ্রাম ওয়াসার সঞ্চালন পাইপলাইনের। এ কারণে তিন দিন ধরেই উৎপাদন বন্ধ কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১-এ। এই সময়ে সংস্থাটি হিসাব করে দেখেছে, ২৪ ঘণ্টায় রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ৪৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এর ফলে ৭৫ ঘণ্টায় মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার টাকায়।

চট্টগ্রাম নগরের কুয়াইশ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে গত সোমবার দুপুর ১২টায় ফুটো হয়ে যায় ওয়াসার মূল সঞ্চালন পাইপলাইন। এরপর পানি শোধনাগারটি বন্ধ করতে হয়েছে। এর ফলে নগরের ৩০টি এলাকার বাসিন্দা পানির চরম সংকটে পড়েছে।

‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ওয়াসার পক্ষ থেকে সিডিএ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলাকালে নগরের কুয়াইশ এলাকায় ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার ব্যাসের সঞ্চালন পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই শোধনাগার থেকে দিনে ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। শোধনাগার বন্ধ থাকার কারণে ওয়াসার রাজস্ব ক্ষতি দিনে ৪৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এর বাইরে মেরামতে খরচ হচ্ছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।

ক্ষতির বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম জানান, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সিডিএর সঙ্গে আগামী সমন্বয় সভায় এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

দিনে ঘাটতি ২৪ কোটি লিটার

ওয়াসা সূত্র জানায়, নগরে পানি সরবরাহের জন্য সংস্থাটির চারটি পানি শোধনাগার রয়েছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে আসে ১৪ কোটি করে ২৮ কোটি লিটার, মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি শোধনাগার থেকে আসে ৯ কোটি লিটার। এ ছাড়া গভীর নলকূপ থেকে আসে ৪ কোটি লিটার পানি। দৈনিক উৎপাদনসক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার।

তিন দিন ধরে উৎপাদন কমে এসেছে। গতকাল বুধবার সংস্থাটি মাত্র ৩২ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করেছে। অথচ নগরে পানির চাহিদা ওয়াসার হিসাবে ৫৬ কোটি লিটার। এর ফলে দিনে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি লিটারে।

ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, শোধনাগার বন্ধ থাকার কারণে নগরের উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, জামালখান, লালখান বাজার, মাদারবাড়ি, জিইসি, মুরাদপুর, কদমতলী, ধনীয়ালাপাড়া, নয়াবাজার, আনন্দবাজার, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, রৌফাবাদ, রুবি গেট, হিলভিউ, মোমেনবাগ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, নন্দনকাননসহ অন্তত ৩০টি এলাকায় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, নগরে এমনিতেই পানির সংকট, সব এলাকায় ওয়াসার পানি পৌঁছায় না; কোথাও সপ্তাহে এক দিন, কোথাও দুই দিন পানি পাওয়া যায়। সোমবার দুপুর থেকে এক ফোঁটা পানিও মিলছে না। এ কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

হালিশহর নয়াবাজার মৌসুমি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন পানির সংকটের বিবরণ তুলে ধরে প্রথম আলোকে বলেন, দুদিন তাঁর পরিবারের কেউ গোসল সারতে পারেননি। এ জন্য আজ বৃহস্পতিবার অফিসেই জামাকাপড় নিয়ে যান। সেখানে গভীর নলকূপের পানিতে গোসল সেরেছেন।

পাইপলাইন মেরামতে দেরি হওয়ার বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ফুটোর পাশাপাশি পাইপলাইনের সংযোগস্থলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাইনটি মাটি থেকে প্রায় পাঁচ ফুট গভীরে। প্রথমে পাইপে জমে থাকা পানি বের করতে হয়েছে। এরপর ঢালাই ভেঙে মেরামতকাজ শুরু করতে হয়। এ কারণে দেরি হচ্ছে। তবে তিনি আশা করছেন, আজ রাতের মধ্যে কাজ শেষ হবে।