গাইবান্ধার পাঁচটি আসনের তিনটিতেই আওয়ামী লীগের নারী প্রার্থী
গাইবান্ধা জেলায় মোট সংসদীয় আসন পাঁচটি। এর মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনটিতেই নারী প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে দুজন বর্তমান সংসদের সদস্য। তিনজনই দলকে জয় এনে দেওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলামের বড় বোন আফরোজা বারী, গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম এবং গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে পেয়েছেন সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম।
গাইবান্ধা-১ আসনে মনজুরুল ইসলাম ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা যান। এরপর ২০১৭ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা। ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর গোলাম মোস্তফা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ২০১৮ সালে ২২ মার্চ দ্বিতীয় দফায় উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন গোলাম মোস্তফার বোন আফরোজা বারী। তাঁকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী। ওই বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন শামীম।
এবার আসনটিতে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বেছে নেওয়া হয়েছে আফরোজা বারীকে। আফরোজা বলেন, নারীদের ক্ষমতায়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আমলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়নের প্রসার ঘটেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের নতুন ধারা সূচিত করেন।
আফরোজা বারী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নারীদের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁদের নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী এ আসনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি শতভাগ আশাবাদী, আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারব।’
গাইবান্ধা-২ আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগমের ওপর এবারও আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ। দুই দফায় তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ মনোনীত হন। তাঁর সময়টায় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মাহাবুব আরা বেগমের অনুসারী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল মুস্তাফিজ বলেন, ‘হুইপের প্রচেষ্টায় এ উপজেলার রাস্তাঘাট, সেতুসহ সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দ্বাদশ নির্বাচনেও ভোটাররা তাঁকে ভোট দেবেন। তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশা করছি।’
গাইবান্ধা-৩ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত বিশিষ্ট চিকিৎসক ইউনুস আলী সরকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ইউনুস আলী ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর মারা যান। ওই আসনে ২০২০ সালের ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী উম্মে কুলসুম নির্বাচিত হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। উম্মে কুলসুম বলেন, ‘আমি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। দ্বাদশ নির্বাচনেও বিজয়ী হব বলে শতভাগ আশা করছি।’
এ ছাড়া বাকি দুই আসনের মধ্যে গাইবান্ধা-৪-এ (গোবিন্দগঞ্জ) দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল কালাম। এর আগে ২০১৪ সালে কালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তাঁর পরিবর্তে এবার দলীয় মনোনয়ন পেলেন আবুল কালাম।
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনটি ছিল সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তিনি মারা যাওয়ার পর আসনটিতে চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের টিকিট পেয়েছেন তিনি।