১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বগুড়ার আলোচিত তুফান সরকার গ্রেপ্তার
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া বগুড়ার আলোচিত তুফান সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত তিনটার দিকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় তাঁর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তুফান সরকার বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার প্রয়াত মজিবর রহমান সরকারের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ ২১টি মামলা আছে। ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় ২০১৭ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তুফান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একাধিক হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) জেদান আল মুসা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তুফান সরকার দুদকের একটি মামলায় ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে ৫টি হত্যাসহ ২১টি মামলা আছে। তিনি এত দিন আত্মগোপনে ছিলেন। তাঁকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
গত ২৭ নভেম্বর বগুড়ার স্পেশাল জজ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ দুদকের মামলায় শুনানি শেষে তুফান সরকারকে সাজা দেন। তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ ছিল।
মামলা সূত্রে জানা যায়, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ সালের মার্চে দুদক থেকে তাঁর কাছে সম্পদবিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হয়। ওই মাসেই দুদকে ৯১ লাখ ৭০ হাজার টাকার স্থাবর ও ৩৮ লাখ ৯ হাজার ১৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেওয়া হয়। সম্পদ যাচাই করে দুদক তুফানের জমি, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংকে সঞ্চয়সহ ১ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের সম্পদের সন্ধান পায়। তাঁর আয়ের বৈধ কোনো উৎস ও তিনি কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল কিংবা কোনো খাতের আয় প্রদর্শন ও আয়কর পরিশোধের প্রমাণ দিতে পারেননি। এ কারণে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বগুড়া সমন্বিত দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তদন্ত শেষে দুদক তুফান সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
২০২১ সালের ১ এপ্রিল দুদকের ওই মামলায় তথ্য গোপন করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে জামিন চান তুফান সরকার, তখন আদালত শুধু রুল দেন। এই রুলের বিষয় গোপন করে ওই মামলায় আবার নতুন করে একই বেঞ্চে জামিন আবেদন করেন তুফান। এই তথ্য গোপনের বিষয়টি জেনে তা আদালতের নজরে আনা হয়।
এর আগে ভালো কলেজে ভর্তির করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই এক ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে তুফান সরকারের সাবেক স্ত্রীর বড় বোন তৎকালীন পৌর কাউন্সিলর মারজিয়া এবং তুফানের সাবেক স্ত্রী ওই মেয়ে ও তাঁর মাকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ মা-মেয়েকে উদ্ধার করে প্রথমে মারজিয়া ও পরে তুফান সরকারসহ সহযোগীদের আটক করে। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে ওই সময় থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এ মামলায় দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন তুফান সরকার। পরে বাদীর সঙ্গে আপস করে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন তুফান।