মাদারীপুরে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে তালা দেওয়ার অভিযোগ
মাদারীপুরের কালকিনিতে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে তালা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আবদুস সোবহান গোলাপ ওই নির্বাচনী ক্যাম্পে থাকা ঈগলের কর্মীদের নিজেই মারধর করেন বলে তাহমিনা বেগম অভিযোগ করেছেন।
এ ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সোহেল রানা আজ বুধবার বিকেলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে আবদুস সোবহান গোলাপ বলছেন, এসব অভিযোগ বানোয়াট ও অপপ্রচার।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ তাঁর নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে কালকিনি পৌর শহরের জুরগাঁও বাজারসংলগ্ন ঈগলের নির্বাচনী ক্যাম্পে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা ৩০ থেকে ৩৫ জন নৌকার কর্মী ঈগলের কর্মী কিরণ সরদার, রুহুল আনি সরদার, জাকির ঘরামী, রুহুল আমিন চোকদারকে মারধর করে বের করে দেন। পরে আবদুস সোবহান গোলাপের নির্দেশে ঈগলের ওই নির্বাচনী ক্যাম্পে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ক্যাম্পের সামনে লাগানো ঈগল প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
নৌকার প্রার্থী গোলাপ নিজে আমাদের ক্যাম্পে দলবল নিয়ে এসে হামলা চালিয়ে তালা মেরে গেছেন। যাওয়ার সময় আমাদের বলে গেছেন, ভবিষ্যতে যেন এই ক্যাম্পের ধারেকাছে কেউ না আসে। এখানে নৌকার বাইরে কেউ অন্য কারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে হুমকি দেন। আমরা আতঙ্কিত।
ঈগলের ওই ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মী সুবেদার আলী সরদার বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী গোলাপ নিজে আমাদের ক্যাম্পে দলবল নিয়ে এসে হামলা চালিয়ে তালা মেরে গেছেন। যাওয়ার সময় আমাদের বলে গেছেন, ভবিষ্যতে যেন এই ক্যাম্পের ধারেকাছে কেউ না আসে। এখানে নৌকার বাইরে কেউ অন্য কারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে হুমকি দেন। নৌকার প্রার্থী ও তাঁর কর্মীদের এমন কর্মকাণ্ডে আমরা আতঙ্কিত।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন প্রার্থী কতটা জঘন্য হলে এমন কাজ করেন, তা বলার ভাষা নেই। গোলাপ সাহেব নিজের হাতে আমাদের একজন কর্মীকে চড়থাপ্পড় দিয়ে ঘাড় ধরে ক্যাম্প থেকে বের করে দিয়েছেন। অন্য কর্মীদের দিয়ে মারধর করাইছে। তাঁর মতো মানুষ কি এটা করতে পারে? আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো তাদের কাল্পনিক, বানোয়াট, মিথ্যাচার ও অপপ্রচার। এটা কি আমার দ্বারা সম্ভব? তাঁরা (স্বতন্ত্র প্রার্থী) যে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট তথ্য দিচ্ছেন, তার একটি পার্ট হচ্ছে এই ঘটনা সাজিয়ে অভিযোগ দেওয়া।’
এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অভিযোগ পেয়ে ওই ক্যাম্পে এসি ল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছে। এখানে আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি।’
মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। তিনি ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। অপর দিকে তাহমিনা বেগম কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।
এর আগে ২৩ ডিসেম্বর কালকিনিতে এসকেন্দার খাঁ (৭০) নামের তাহমিনা বেগমের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাহমিনা বেগমের শিবির থেকে অভিযোগ করা হয়, ২১ ডিসেম্বর ঈগলের মিছিলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই আসনের নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের সমর্থকেরা এসকেন্দারকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
এ ছাড়া ২১ ডিসেম্বর কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় ঈগলের সমর্থকদের মিছিলে মুহুর্মুহু বোমা হামলা করা হয়। এতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। নৌকার কর্মীরা এই মিছিল লক্ষ্য করে বোমা মারেন বলে অভিযোগ করেন ঈগলের কর্মীরা।