গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বেড়ায় শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পাবনার বেড়া উপজেলার পাঁচ শতাধিক শীতার্ত ব্যক্তির মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বেড়া পৌর এলাকার সান্যালপাড়া ঈদগাহ মাঠেছবি: প্রথম আলো

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পাবনার বেড়া উপজেলার পাঁচ শতাধিক শীতার্ত ব্যক্তির মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার বেড়া পৌর এলাকার সান্যালপাড়া ঈদগাহ মাঠে শহীদদের নামে নয়টি স্টল বানিয়ে তাঁরা এ শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। একই সময় গ্রাফিতি প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হয়।

‘দুই টাকায় আমেজ’ নামে ব্যতিক্রমী এ কর্মসূচির আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকায় পথচলা সংগঠন ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’। এ আয়োজনে অবশ্য বেড়া উপজেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তার পাশাপাশি সংগঠনের সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়ন ছিল।

সকাল ১০টায় শুরু হওয়া গ্রাফিতি প্রদর্শনী ও শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বেড়ার একমাত্র শহীদ খোকন সরদারের বাবা আবদুল আজিজুল সরদার। বেড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মঈনউদ্দিন খাজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোরশেদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সদস্য আবদুল বাসেত খান।

অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে দেখা যায়, গণ-অভ্যুত্থানে পাবনার শহীদ ৬ জনের নামসহ মোট ৯ জন শহীদের নামে ৯টি স্টল তৈরি করা হয়েছে। এসব স্টল থেকে শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। কোনো স্টল থেকে কম্বল, কোনো স্টল থেকে চাদর, আবার কোনো স্টল থেকে হুডি বিতরণ করা হয়। এসব পণ্যের প্রতীকী দাম দুই টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও কেউ তা দেননি। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ হাসি ফোটায় নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষের মুখে।

বেড়া পৌর এলাকার শেখপাড়া মহল্লার মালতী খাতুন বলেন, ‘শীতে কষ্ট পাতেছিল্যাম। কম্বল কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না। এই জায়গার থিক্যা কম্বল পায়া শীতের কষ্ট দূর হবি।’

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের সভাপতি মেহেরাব হোসেন বলেন, ‘টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। এখন অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সবার সহযোগিতা পেয়েই আমরা অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে পারলাম।’

বেড়ার ইউএনও মোরশেদুল ইসলাম বলেন, বেড়ার শিক্ষার্থীরা মানবসেবার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সাত-আট বছর ধরে তাঁরা বিভিন্নভাবে অসহায় মানুষদের সহায়তা করে যাচ্ছেন। তাঁদের এমন কর্মসূচি দেখে দেশের অন্য এলাকার শিক্ষার্থীরা ভালো কাজে অনুপ্রাণিত হবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

প্রসঙ্গত, সাত থেকে আট বছর আগে ঐতিহ্যবাহী সরকারি বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে গঠন করে শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন। তারা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অসহায়দের সহায়তা দেওয়া শুরু করে। পরে অনেক সচ্ছল ও ধনাঢ্য ব্যক্তি তাদের তহবিলে অর্থসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করেন। বর্তমানে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী।