রাজশাহীর পবা উপজেলা নওহাটা পৌর এলাকার হাট ইজারার টাকা নিয়ে সদ্য সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান এখন লাপাত্তা। এ জন্য পৌর প্রশাসক হাটগুলোর আগের ইজারা বাতিল এবং ইজারাদারদের নামে মামলা করেছেন। এর পাশাপাশি গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে হাটগুলো ইজারা দিয়েছেন।
চলতি অর্থবছরে নওহাটা পৌরসভার পাঁচটি হাট ইজারা নিয়ে ইজারাদারেরা সরকারি দরের কেবল ৩০ শতাংশ টাকা জমা দিয়েছেন। বাকি ৭০ শতাংশ টাকা তাঁরা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন নওহাটা পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিষয়টি ধরা পড়ে। তিনি ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বকেয়া ইজারার টাকা পরিশোধের সময় দেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইজারাদারেরা বকেয়া পরিশোধ না করলে তিনি গত মঙ্গলবার ইজারা বাতিল করেন। এরপর তাঁদের বিরুদ্ধে ‘সার্টিফিকেট মামলা’ করেন।
গতকাল এই ছয় হাট অর্থবছরের বাকি ৫ মাস ২০ দিনের জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ ৮১ হাজার ৮০৪ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। এবার দরপত্র বিক্রি হয়েছে ১১৫টি, যার মূল্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। কোরবানির ঈদের বাজার পাওয়া গেলে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে হাটগুলো ইজারা হতো বলে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারেরা জানিয়েছেন। ছোট একটি হাট স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মৌখিকভাবে ইজারা দেওয়া হতো। এবার সেই হাটটিও ইজারা হয়েছে।
বাংলা ১৪৩১ সনের জন্য বছরের শুরুতে এই হাটগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছিল ২ কোটি ১ লাখ টাকায়। কিন্তু ইজারাদারেরা সরকারি দরের ৩০ শতাংশ টাকা ছাড়া বাকি টাকা পরিশোধ করেননি। ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, বছরের শুরুতে যে দরে হাটগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছিল মামলা শেষে সরকার সেই টাকা পাবে। আর বাকি সময়ের জন্য এখন যে টাকায় ইজারা দেওয়া হলো, সেটা বাড়তি পাওনা হলো।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৫ মাস ধরে ইজারাদারেরা হাটের টোল আদায় করছেন। ইজারা পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ইজারার পুরো টাকা পরিশোধের নিয়ম থাকলেও তারা তা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। ইজারাদারদের কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, নওহাটা পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র ও পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান তাঁদের কাছে একটি কাগজে সই করে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দেননি। এখন তাঁরা বিপদে পড়েছেন।
নওহাটা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পবা উপজেলার পশুহাট উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি হাট। এর মধ্যে ১ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ৫০২ টাকায় পশুহাটের ইজারা পান মাজেদুল ইসলাম। তিনি ৪০ লাখ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেছেন। তাঁর ভ্যাট ও উৎসে করসহ বাকি আছে ৭১ লাখ ১০ হাজার ৫০২ টাকা। আবদুল মান্নান ৬৮ লাখ ৪০ হাজার টাকায় তহা বাজার ইজারা পান। তাঁর ভ্যাট ও উৎসে করসহ বাকি আছে ৪১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। সিন্ধুর কুসুম্বী হাটের ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকায় ইজারা পান সালাম মোল্লা। ভ্যাট ও উৎসে করসহ তাঁর বাকি আছে ১৩ লাখ ২৩ হাজার ২৪০ টাকা। কসাইখানা ২ লাখ ৭ হাজার ৭৫০ টাকায় ইজারা পান রকি। তাঁর ভ্যাট ও উৎসে করসহ বাকি ১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩৮ টাকা। একই ভাবে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ পবা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক প্রদীপ কুমার সাহা ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায় বাগধানী হাটের ইজারা পান। ভ্যাট ও উৎসে করসহ ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ টাকা বাকি আছে তাঁর। বায়াগঞ্জ হাটটির ইজারা মূল্য তেমন পাওয়া যায় না বলে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানকে মৌখিকভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, ইজারাদার মাজেদুল ইসলাম পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রথমে পরিশোধ করা টাকা ছাড়াও তিনি নওহাটা পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমানের কাছে ১৮ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। একটি সাদা কাগজে হাফিজুর রহমান সই করে টাকা নিয়েছেন। সেই কাগজও তিনি প্রমাণ হিসেবে জমা দিয়েছেন।
ইউএনও সোহরাব হোসেন জানান, মাজেদুলের মতো কয়েকজন ইজারাদার তাঁর কাছে একই দাবি করেছেন।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর হাফিজুর রহমান এলাকায় নেই। তাঁর মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও যোগাযোগ করা যায়নি।
হাফিজুর রহমানের আগের মেয়াদে বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন নওহাটা পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই ১৫ বছরে তাদের ভয়ে কেউ হাট ইজারার শিডিউল কাটতে সাহস পাননি। আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন নামে হাটগুলো নিজেদের মতো করে ডেকে নিয়ে টোল আদায় করতেন। যে কারণেই চলতি মেয়াদের শুরুতে যারা ইজারা নিয়েছিলেন, তাঁদের ইজারার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। দীর্ঘদিন পর এবার উন্মুক্ত ডাক হলো। এ জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক দরপত্র জমা পড়েছে।