দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে ডেকে সহকর্মীকে হত্যার অভিযোগ, আটক ১
নরসিংদীর মনোহরদীতে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে ডেকে নিয়ে সহকর্মীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাত নয়টার দিকে উপজেলার গোতাশিয়া ইউনিয়নের নামা গোতাশিয়া এলাকা থেকে ওই তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তরুণের অভিযুক্ত সহকর্মীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
নিহত তরুণের নাম আবুল কালাম (২২)। তিনি মনোহরদীর গোতাশিয়া ইউনিয়নের ঠেকেরকান্দা গ্রামের আবদুস ছাত্তারের ছেলে। আটক ব্যক্তির নাম বিল্লাল হোসেন (২৮)। তিনি একই ইউনিয়নের নামা গোতাশিয়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। তাঁরা দুজনই পেশায় রংমিস্ত্রি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করতেন তাঁরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার দুপুরে দাওয়াতের কথা বলে আবুল কালামকে বাড়িতে ডেকে নেন বিল্লাল হোসেন। দুপুরের খাওয়ার পর তাঁরা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পাশের ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন একটি বাঁশঝাড়ে যান। সেখানে প্লাস্টিকের একটি পাটি বিছিয়ে তাঁরা দুজন বসেছিলেন। পরে বিকেলের দিকে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিল্লাল ক্ষিপ্ত হয়ে একটি ধারালো দা নিয়ে এসে আবুল কালামের গলায় কয়েকটি কোপ দেন। ঘটনাস্থলেই কালামের মৃত্যু হয়। এ সময় পালিয়ে না গিয়ে ঘটনাস্থলেই থেকে যান বিল্লাল। পরে স্থানীয় লোকজন বিল্লালকে আটক করে পুলিশকে খবর দেন।
স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে মনোহরদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত তরুণের লাশ উদ্ধার করেন। এ সময় আবুলের গলায় একাধিক কোপের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। পরে বিল্লাল পুলিশের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন। এ সময় তাঁর দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়। সেখানে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর রাতে বিল্লালকে থানায় নেওয়া হয়।
এসআই হারুন অর রশিদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁদের দুজনের মধ্যে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ কারণে তিনি কালামের প্রতি বিরক্ত ছিলেন। এ ক্ষোভ থেকে তাঁকে ডেকে এনে হত্যা করেন। তবে বিল্লালের দেওয়া তথ্য সত্য কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তিনি জানান।
নিহত আবুল কালামের মা মার্জিয়া বেগম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজের সূত্রে বিল্লাল ও কালামের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। বিল্লাল আমাকে মা বলে ডাকত। নিয়মিত আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। গতকাল তারা কাজে যায়নি। দুপুরে আমার ছেলেকে ফোন দিয়ে ডেকে নেয় বিল্লাল। বিকেলে জানতে পারি, বিল্লাল আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রতন কবির ফরাজী বলেন, বিল্লাল ও কালাম সব সময় ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো চলাফেরা করতেন। আবুল কালামের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, এলাকাবাসী বিল্লালকে আটকে রেখেছেন। পরে বিল্লাল উপস্থিত সবার সামনে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পরে বিল্লালকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত বিল্লাল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। প্রকৃত রহস্য জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।