দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর শ্রীপুরে এক মঞ্চে ভাই-বোন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর আংশিক) আসনে প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ কাকে বেছে নেয়, তা নিয়ে ছিল চাপা উত্তেজনা। দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনসহ অনেকে। তবে সবাইকে অবাক করে দল মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলীকে। বর্তমান জাতীয় সংসদে তিনি সংরক্ষিত আসনের সদস্য।
আসনটিতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন রুমানার ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামিল হাসানও। স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ কিছুদিন ধরে ভাই–বোনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। দলীয় কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করছিলেন তাঁরা। তবে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরদিনই তাঁদের দেখা গেল এক মঞ্চে। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় নিজ বাড়িতে মতবিনিময় সভায় তাঁরা এই ঘোষণা দেন। এ সময় তাঁরা একসঙ্গে বাবার কবরও জিয়ারত করেন।
রুমানা ও জামিল হাসানের বাবা রহমত আলী গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীও। ২০১৮ সালে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনায় মারা যান রহমত আলী। সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হন রুমানা।
রুমানা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর শ্রীপুর উপজেলা সদরের নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় আজ দুপুর ১২টায় মতবিনিময় সভা আহ্বান করেন ভাই জামিল হাসান। এতে উপস্থিত ছিলেন রুমানা আলীও। সভায় জামিল হাসান বলেন, ‘আমি একটা পরিস্থিতিতে আপনাদের কাছে এসেছিলাম। পরিষ্কার করে বলতে চাই, রহমত আলীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আমরা এক ও অভিন্ন। বিরোধ থাকতে পারে না। আমাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।’
মতবিনিময় সভায় একই কথা জানান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া রুমানা আলীও। সবার সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই আমাদের দুজনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। আমার পিতা রহমত আলীর সঙ্গে যেভাবে কাজ করেছেন, সেভাবে আমাদের সঙ্গেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে রুমানা ও জামিলের বিরোধ এবং দুজনেরই মনোনয়ন ফরম তোলা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বোন মনোনয়ন পাওয়ায় জামিল স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করছিলেন। ২০১৮ সালেও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জামিল। ওইবারও পাননি। এক মঞ্চে মতবিনিময় সভার পর ভাই ও বোনের বিরোধ নিয়ে সব গুঞ্জনের অবসান হলো।
রুমানা ও জামিলকে এক মঞ্চে দেখে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল আওয়ামী লীগও। গাজীপুর-৩ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ কর্মী আক্তার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন দলীয় বিরোধের কারণে অনেক নেতা–কর্মী পদবঞ্চিত ও দলছুট ছিলেন। তাঁদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনী মাঠে নামতে পারলে সফলতা অর্জন সহজ হবে। রাসেল আহমেদ নামের আরেক কর্মী বলেন, জ্যেষ্ঠ একজন রাজনীতিবিদের উত্তরসূরির ওপর দলীয় প্রধান আস্থা রেখেছেন। সেই আস্থা রক্ষায় কাজ করতে হবে সবাইকে। নির্বাচনে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করতে হবে।