পদ্মার ভাঙনে ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার প্রায় ১ হাজার পরিবার
পদ্মা নদীর ভাঙনে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট-সংলগ্ন এলাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় এক হাজার পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত ভাঙন–আতঙ্কে দিন পার করছেন। এর আগেও একাধিকবার তাঁরা ভাঙনের শিকার হয়েছেন। অনেকে সবকিছু হারিয়ে ফেরিঘাট এলাকায় বসতি গড়ে তুলেছেন। ভাঙন ঠেকানো না গেলে তাঁরা কিছু রক্ষা করতে পারবেন না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরো ফেরিঘাট এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে। আর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, লঞ্চঘাট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সীমাবদ্ধ বরাদ্দের কারণে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ পুরোদমে করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর প্রতিদিন নদীর পানি, ভাঙনও বাড়ছে। ঘাটে বড় ফেরি ভেড়ানো এবং ছেড়ে যাওয়ার সময় পাখার ঘূর্ণায়নে তৈরি স্রোতে নদীর পাড় বেশি ভাঙছে। ভাঙন ঠেকাতে বিআইডব্লিউটিএ বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে। এখনো অনেক এলাকা বাকি রয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটসহ স্থানীয় ছাত্তার মেম্বার পাড়া, বাহির চর দৌলতদিয়া, মজিদ শেখের পাড়া ও ব্যাপারী পাড়ার প্রায় এক হাজার পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
ছাত্তার মেম্বার পাড়ার গৃহবধূ রিনা খাতুন বলেন, ‘দুই বছর ধরে নদী ভাঙছে। এ বছর ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে বেশি ভাঙছে। এলাকার মেম্বারকে মেলা অনুরোধ করেছি, কিছু বস্তা ফেলার জন্য। কথা না শোনায় আমি আর আমার স্বামী টাকা দিইয়া বস্তা কিইনা বালি ভরে বস্তা ফেলছি।’ প্রবীণ বাসিন্দা আতর আলী খা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পর যেভাবে ভাঙছে অহন আমাদের থাকার কায়দা নাই। আমাদের কথা বলার জায়গা নাই। এখানে খবির আলী খাঁ, আতর আলী খাঁ, জাফর আলী সরদার, হাসেন মণ্ডলের বাড়ি যেকোনো সময় নদীতে চলে যাবে। ২০ বছর আগে কুশাহাটা নিজের বাড়ি, জমি সব নদীতে চলে গেছে। তারপর এহানে আসি। এখন আবার ভাঙন। কোথায় যাব, সেই জায়গাটুকু আমাদের নেই।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মোল্যা বলেন, ‘পদ্মার ভাঙনে মা-বাবার কবর অনেক আগেই বিলীন হয়েছে। ঈদের নামাজ পড়ে মা–বাবার কবর জিয়ারত করতে পারি না। ছাত্তার মেম্বার পাড়া, বাহির চর দৌলতদিয়া ও ব্যাপারী পাড়ার বহু ভিটা বিলীন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমাদের দেখার মতো কেউ নেই।’
খবর পেয়ে গতকাল রোববার দুপুরে ভাঙন এলাকায় যান গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম মণ্ডল প্রমুখ।
মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, কয়েক বছরে ঢল্লাপাড়ায় বহু বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে তিনি ৭ নম্বর ঘাট থেকে অবিলম্বে ফেরি সরিয়ে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করার আহ্বান জানান। দ্রুত কাজ শুরু না হলে ৭ নম্বর ঘাটে ফেরি ভিড়তে দেওয়া হবে না।
ইউএনও জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙন বেড়েছে। দ্রুত নদী শাসনের কাজ শুরু না করলে বিশাল এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। গত সপ্তাহে ফেরিঘাট এলাকার একটি রাস্তা বিলীন হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক সালাহ উদ্দিন বলেন, পুরো ফেরিঘাট এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে। ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিতে। বর্তমানে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর তিনটি ঘাট চালু থাকলেও ৭ নম্বর ঘাটের ডাউনে বিকল্প আরেকটি ঘাট তৈরিতে বিআইডব্লিউটিএকে অনুরোধ করেছেন।
বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, সীমাবদ্ধ বরাদ্দের কারণে চাইলেও বেশি কাজ করা যাচ্ছে না। বরাদ্দ পেলে ভাঙন স্থানে জিওব্যাগ ফেলা হবে। এ ছাড়া বন্ধ থাকা ৬ নম্বর ঘাট চালুর চেষ্টা চলছে। তাহলে দৌলতদিয়ায় ৪টি ঘাট চালু থাকবে।