বাগেরহাট থেকে খুলনাসহ সব রুটে বাস বন্ধ, ছোট যান চলাচলেও বাধা
খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগের দিন বাগেরহাট থেকে খুলনা–ঢাকাসহ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ শুক্রবার ভোর থেকে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আন্তজেলা ও বাগেরহাটের অভ্যন্তরীণ কোনো রুটের বাস ছেড়ে যায়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন আজ সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা পরীক্ষার্থীরা।
বাস বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল, ভ্যান, ইজিবাইক ও পায়ে হেঁটে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে আসতে দেখা গেছে। তবে পথে পথে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরীক্ষার্থীরা।
আজ সকালে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনালের সব কটি পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ। বাগেরহাট থেকে খুলনাগামী বাস ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো বাসই চলছে না। বাস টার্মিনালসহ আশপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে টহল দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার বারাকপুর ও যাত্রাপুর এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাঠি হাতে টহল দেওয়া নেতা–কর্মীরা ভ্যান, রিকশা, ইজিবাইক ও অটোরিকশা থামিয়ে চালকদের বকাঝকা করছেন। শুধু খুলনার দিকে যেতে নয়, খুলনার দিক থেকে যাত্রী নিয়ে আসা ইজিবাইক চালকদেরও বাগেরহাট শহরের দিকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। এ সময় চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের কাঠের চলা নিয়ে তেড়ে আসতে দেখা যায়। এ ছাড়া ফকিরহাট, নওয়াপাড়া, কাটাখালীসহ বিভিন্ন মোড়ে ট্রাক, মাইক্রোবাস থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে বাগেরহাট থেকে গোপালগঞ্জে যাচ্ছিলেন ইয়ামিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘কোনো যানবাহন না পাওয়ায় এখন হাঁটছি। সমাবেশ খুলনায় হলেও ঢাকার পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন সময়মতো কেন্দ্রেই হয়তো যেতে পারব না।’
পাবনা থেকে পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন হাসান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ভোর চারটার দিকে তিনি খুলনায় পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে ভ্যানে বাগেরহাট আসতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় ৪ ঘণ্টা। পথে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ভ্যান থামানো হয়েছে। ভ্যানচালককে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করা হয় যে ওই ভ্যানচালক বিএনপির কোনো লোককে খুলনায় নিয়ে গিয়েছিলেন কি না।
আগামীকাল শনিবার খুলনা মহানগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সমাবেশকে সামনে রেখে খুলনা জেলা বাসমালিক সমিতির পক্ষ থেকে ২১ ও ২২ অক্টোবর বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাসমালিক সমিতি এ ক্ষেত্রে ভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছে। গত বুধবার দুপুরে ‘খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি’ নামের সংগঠন থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নছিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন যদি সড়কে ওই অবৈধ যান চলাচল ও কাউন্টার বন্ধ না করে, তাহলে পরবর্তী দুই দিন ২১ ও ২২ অক্টোবর মালিক সমিতির সব রুটের গাড়ি বন্ধ থাকবে।
জানতে চাইলে বাগেরহাট আন্তজেলা বাস–মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আবদুল বাকি বলেন, মহাসড়কে মাহেন্দ্র, ইজিবাইকসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে মালিক–শ্রমিকেরা পরিবহন ধর্মঘট পালন করছেন।
বিএনপির নেতা–কর্মীদের হয়রানি
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা ও সমাবেশে যোগ না দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা এলাকাভিত্তিক বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের ডেকে সমাবেশের দিন এলাকার বাইরে না যাওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।
এমন দুজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়েছে প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ডেকে বলেছেন, ‘২২ তারিখ সবাইকে এলাকায় থাকতে হবে। কেউ যেন সমাবেশে না যায়। এলাকায় সবাই যেন মিলেমিশে থাকি। ঝামেলায় পড়তে না চাইলে এলাকায় থাকিস।’
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির পক্ষে সাধারণ মানুষের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে পড়েছে। আজ থেকে গাড়ি বন্ধ করা হয়েছে যেন বিএনপির সমাবেশে মানুষ যেতে না পারে। গতকাল সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা–কর্মীদের খুলনা যাওয়ার পথে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মারধরও করা হয়েছে।
সড়কে যান চলাচলে বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক ও পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, সড়কে কোথাও যান চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে এমন তথ্য পুলিশের কাছে নেই।