বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধের পর আজ শনিবার সকাল থেকে খুলনাগামী ট্রেনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন বাহনে খুলনায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে পথে পথে তাঁদের পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলা ও বাধার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পথে পথে সরকারের নজিরবিহীন বাধার শিকার হচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টায় খুলনা রেলস্টেশনে যশোরের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করলে পুলিশ অতর্কিত সেখানে গিয়ে লাঠিপেটা করে। এতে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের আধা ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
অনিন্দ্য ইসলাম আরও বলেন, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে কেশবপুর থেকে নেতা-কর্মীরা পিকআপে খুলনায় যাচ্ছিলেন। পথে সোনাডাঙ্গা এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক নিয়ে হামলা করেন। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। চারজনের অবস্থা গুরুতর। সরকারের শত বাধা উপেক্ষা করে যশোর থেকে প্রায় ২৫ হাজার নেতা-কর্মী খুলনার সমাবেশে এসেছেন।
এদিকে সড়ক ও নৌপথে ধর্মঘটের পর হঠাৎ খুলনাগামী ট্রেন বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ পথে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা। এ কারণে যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে কেউ খুলনায় যেতে পারছেন না।
গতকাল সকাল থেকে যশোর দিয়ে খুলনায় কোনো বাস ঢুকতে পারেনি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সব বাস যশোর থেকে ফিরে আসে। আজ সকাল থেকে খুলনা-রাজশাহী রেলপথে চলাচল করা ‘সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস’ ও খুলনা-বেনাপোল রেলপথে চলাচল করা ‘বেতনা’ ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে। গতকাল বাস বন্ধ থাকায় ট্রেনে ব্যাপক ভিড় বাড়ে। মানুষ কষ্ট করে হলেও ট্রেনে খুলনায় যাতায়াত করছিলেন। আজ সেটিও বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
যশোর রেলওয়ে জংশন সূত্র জানায়, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন যশোরে পৌঁছানোর কথা সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আর খুলনা-বেনাপোল রুটের বেতনা ট্রেনের যশোরে পৌঁছানোর কথা ছিল ১০টা ৫৮ মিনিটে। কিন্তু দুটি ট্রেনের কোনোটি আজ যশোরে আসেনি।
যশোর জংশনের স্টেশনমাস্টার আয়নাল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছে। ট্রেনটি এখন ঈশ্বরদীতে আছে। আর খুলনা-বেনাপোল রেলপথে চলাচল করা বেতনা ট্রেনের বগিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে কারণে সকালে খুলনা থেকে ট্রেনটি বেনাপোলে ছেড়ে যায়নি।
এদিকে আজ যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া-খুলনার মধ্যে চলাচল করা গড়াই, রূপসা পরিবহনসহ বিভিন্ন রুটের বাস টার্মিনালে এসে থেমে যাচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। সিরাজগঞ্জ থেকে খুলনা যাওয়ার উদ্দেশে উত্তরবঙ্গ থেকে বাসে ওঠেন আবদুল আলিম নামের এক যাত্রী। যশোর টার্মিনালে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি কীভাবে খুলনায় পৌঁছাবেন, সেই দুশ্চিন্তায় আছেন।
আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। খুলনায় সড়কে শ্রমিকের কাজ করি। খুলনায় বাস যাচ্ছে না। এটা তো আগে জানতাম না। যশোরে আমাকে নামিয়ে দিয়েছে। এখন তো চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।’
পরিবহনশ্রমিকেরা বলছেন, খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ শেষ হওয়ার পর বিকেল চারটার পরে বাস চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, খুলনার গণসমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে সরকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে পরিবহনমালিকেরা খুলনা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। সব বাধা পেরিয়ে যশোর জেলার কয়েক হাজার নেতা-কর্মী খুলনায় সমাবেশস্থলে পৌঁছে গেছেন। সমাবেশে আসা বন্ধ করতে বিএনপির অন্তত ৬৩ জন্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রেলস্টেশনে নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার দাবি করেন, নিজেদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষে জড়ান আগত ব্যক্তিরা। একপর্যায়ে তাঁরা স্টেশনের গ্লাস ভাঙচুর করেন। পুলিশকে খবর দিলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সোনালী সেন বলেন, সমাবেশে আসতে কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।