কুমিল্লাতেও গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয়, চুলা জ্বলেনি

কুমিল্লা নগরের গ্যাস না থাকায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। গ্যাসের চুলার পাশে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে রান্না করছেন এক গৃহিণী। শুক্রবার নগরের অশোকতলা এলাকার একটি বাড়িতে
ছবি: এম সাদেক

এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে কুমিল্লায় গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে করে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গৃহস্থালি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। রাত থেকে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চুলা জ্বলেনি। ফলে হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল ইসলাম আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তরের টার্মিনালে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। আজ রাত ১০টার মধ্যে ওই সংকট কাটিয়ে ওঠার কথা।

আরও পড়ুন

বিজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ঠান্ডা, শীত ও কুয়াশার কারণে কুমিল্লায় তীব্র গ্যাস–সংকট রয়েছে। এ নিয়ে গ্রাহকেরা এমনিতেই ক্ষুব্ধ। তার ওপর আজ দিনব্যাপী পুরোপুরি গ্যাস না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে। আজ সকালে গৃহিণীরা চুলা ধরাতে গিয়ে দেখেন, চুলায় গ্যাস নেই। চুলা জ্বলে না। ওই কারণে তাঁরা সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবার তৈরি করতে পারছেন না।

নগরের পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস জাহান বলেন, বছরের পর বছর শীতে কুমিল্লায় গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। ওই সংকট দূরীকরণে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় রান্নাবান্না করতে হয়েছে বিকল্প উপায়ে।

আরও পড়ুন

নগরের অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা তুহিন নাহার বলেন, ‘চুলায় গ্যাস না থাকার কারণে ভিন্ন উপায়ে রান্না করি। মাটির চুলা বানিয়ে তাতে রান্না করি। কখনো সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে রান্না করি। এভাবে প্রতিনিয়ত খরচ বাড়ছে। সামনে গ্যাসের দামও বাড়বে বলে শুনেছি।’

বিজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) সাইফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা থেকে ২৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। ওই গ্যাসের মধ্যে ১৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎ খাতে ও ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালি খাতে সরবরাহ করা হয়।

আরও পড়ুন

বিজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, বিজিডিসিএল কুমিল্লার আওতাধীন বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার মধ্যে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ২৮টি গৃহস্থালি গ্যাসের সংযোগ আছে। এখানে ৯১টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ৫৭৫টি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ১ হাজার ৫৬৩টি হোটেল–রেস্তোরাঁ, ৮১টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ১৮৪টি শিল্পকারখানা, একটি সার কারখানা ও ১৪টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র রয়েছে।

একই কারণে চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুরসহ অনেক জায়গায় আজ সারা দিন বাসাবাড়ি, কারখানায় গ্যাস পাওয়া যায়নি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গ্যাস মিলছে না। এ কারণে সড়কে কমে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল।