খাগড়াছড়িতে সাপ্তাহিক হাটে আসেননি পাহাড়ি ক্রেতা-বিক্রেতারা

খাগড়াছড়ি বাজারের সাপ্তাহিক হাটের সবজি বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট করা স্থানে একজন বিক্রেতা ক্রেতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। পাহাড়িরা না আসায় বাজার ছিল ফাঁকা। শহরের পুরান বাজার এলাকা থেকে আজ সকালে তোলাছবি- জয়ন্তী দেওয়ান

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার জেলা সদরের সাপ্তাহিক হাটের দিনে কোনো পাহাড়ি ক্রেতা-বিক্রেতাকে দেখা যায়নি। এ নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। পাহাড়িরা না আসায় বাজারও জমেনি। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আজ সকাল আটটায় খাগড়াছড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ক্রেতা–বিক্রেতা নেই বললেই চলে। যেসব বাঙালি বাজার করতে এসেছেন, তাঁরাও দ্রুত কাজ সেরে চলে যান। স্বাভাবিক সময়ে হাটের দিন ভিড় ঠেলে চলাচল করতে হয় ক্রেতাদের। কিন্তু আজ বাজার ছিল ফাঁকা। বেশ কিছু দোকানও খোলেনি। অন্য দিনের তুলনায় গাড়ির সংখ্যাও ছিল কম।

খাগড়াছড়ি বাজারের মুদিদোকানের ব্যবসায়ী মো. লোকমান বলেন, এক সপ্তাহ হলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে আজ কোনো বেচাকেনা নেই। পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালি ক্রেতারাও বাজারে কম এসেছেন।

খাগড়াছড়ি বাজার কমিটির সভাপতি মো. ইউনুস বলেন, ‘পাহাড়িরা কেন আজ সাপ্তাহিক হাটে আসেননি, বিষয়টা আমার জানা নেই। আমার ধারণা, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের মনে ভয়ভীতি কাজ করছে। একটা বাজারে এভাবে লোকজন না এলে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘পাহাড়িরা বাজারে না আসার বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।’

এদিকে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত মঙ্গলবার গণপিটুনিতে নিহত খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানার লাশ তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। আজ ভোরে তাঁর লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন স্বজনেরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নিহত শিক্ষক সোহেল রানার ভগ্নিপতি জুনাব আলী।

পাহাড়ি ক্রেতা–বিক্রেতারা না আসায় খাগড়াছড়ি বাজারের সাপ্তাহিক হাট জমেনি আজ। হাট বসার স্থানটি ফাঁকা পড়ে আছে। শহরের পুরান বাজার এলাকা থেকে আজ সকালে তোলা
ছবি- জয়ন্তী দেওয়ান

শিক্ষককে হত্যার জের ধরে গত মঙ্গলবার দুপুরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে খাগড়াছড়ি শহরে ওই দিন বেলা ৩টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। এ সময় সদরের মহাজনপাড়া ও পানখাইয়াপাড়া সড়কের চাইহ্লাউপাড়ার কয়েকটি দোকান ও একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাঙচুর করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মঙ্গলবারের ঘটনায় গতকাল বুধবার খাগড়াছড়ি সদর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর একটি ধর্ষণের, অপরটি সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার মামলা। ধর্ষণের মামলাটি করে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর পরিবার। আর অপর মামলার বাদী পুলিশ। মামলার পাশাপাশি এ ঘটনায় খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোহেল রানার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।