রাজশাহীতে গরুর চামড়া ২০০-৭০০ টাকা, ছাগলের চামড়ার ক্রেতা নেই
রাজশাহীতে পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর চামড়ার দামে খুশি নন বিক্রেতারা। এক বা দুই লাখ টাকার একটি গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া কিনছেনই না ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত ছাগলের চামড়ার দাম পেয়েছেন। কেউ আবার গরুর চামড়ার সঙ্গে টাকা ছাড়াই ছাগলের চামড়া দিয়ে দেন। এদিকে এবার দেখেশুনে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। ত্রুটিপূর্ণ চামড়া দেখলেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
গতকাল সোমবার বেলা ২টার দিকে নগরের কাজলা এলাকা থেকে গরুর চামড়া কিনে মিনি ট্রাকে তুলছিলেন দুই তরুণ। ৩০-৪০টি গরুর চামড়ার ভেতরে কয়েকটি খাসির চামড়াও ছিল। গরুর চামড়া তোলা শেষে ওই দুই তরুণ হাত ধোয়ার পানি খুঁজছিলেন। ব্যবসায়ী আনোয়ার আলী তাঁদের বললেন, ‘ওই কয়েকটাও তুলে দাও।’ পরে তিনি নিজেই তুললেন।
আনোয়ার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ছাগলের চামড়া কিনে পরে ফেলে দিতে হয়। ব্যবসায়ীরা নিতেও চান না। তাই এবার ছাগলের চামড়া কিনছেন না। অনেকেই টাকা ছাড়াই ভ্যানে তুলে দিয়েছেন। তাই নিয়ে নিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য, এবার গরুর চামড়ার দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। তিনি বড় গরুর চামড়া ৭০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। গতবার সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায় কিনেছিলেন।
নগরের পঞ্চবটী শ্মশানঘাট এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘গতবার ছাগলের চামড়ায় লস খেয়েছি। পা ধরে ছাগলের চামড়া দিয়ে আসছি। ১০০ টাকায় ৮৪টি খাসির চামড়া বিক্রি করেছি। এবার আর কিনছি না। এবার গরুর চামড়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে কিনেছি। এখন বড় ব্যবসায়ীরা জানেন, কী দাম আছে কপালে।’
রাজশাহীর বিভিন্ন মোড়ে ও এলাকায় চামড়া বেচাকেনা চলে। নগরের রেলগেট এলাকায় বিকেল থেকেই চামড়া বেচাকেনা শুরু হয়। সেখানে অন্যান্য এলাকা থেকে চামড়া বিক্রির উদ্দেশ্যে আসতে থাকে। ব্যবসায়ীরা এখানে এসে দর-কষাকষি করে চামড়া কিনে থাকেন।
নগরের তেরখাদিয়া এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে একটি গরুর চামড়া বিক্রি করতে আসেন সিদ্দিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। অনেক বড়মুখে তিনি চামড়ার দাম দুই হাজার টাকা হাঁকলেন। পরক্ষণেই আবদুস সামাদ নামের এক ব্যবসায়ী চামড়ার দাম বললেন ১০০ টাকা। এ কথা শুনে সিদ্দিকুরের মুখ কালো হয়ে যায়। পরে দর-কষাকষির পর সেই চামড়া তিনি ২০০ টাকায় বিক্রি করেন। ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ বলেন, ‘এই গরুর চামড়াতে সমস্যা আছে। গায়ে ফুটি ফুটি চিহ্ন। লবণ ছিটানোর পর মেশিনে রাসায়নিক দিয়ে ধুইলে চামড়া গলে যাবে।’
রেলগেট এলাকায় একটি ভ্যানে ১৬-১৭টি গরুর চামড়া নিয়ে বসেছিলেন ব্যবসায়ী ইয়াজ নুর। এক ব্যক্তি চামড়া বিক্রি করতে এলে তিনি দাম বললেন ১০০ টাকা। পরে দাম ২৫০ পর্যন্ত উঠলেও তিনি বিক্রি করতে রাজি হলেন না। বললেন, মসজিদ মাদ্রাসায় দান করবেন। এত কমে বিক্রি করবেন না। চামড়ার দাম জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘এটা আমাকে না, সরকারকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আগে তো এক চামড়ার দামই ছিল দেড় দুই হাজার।’
ব্যবসায়ী ইয়াজ নুর বলেন, ভালো চামড়ার দাম ভালো। তিনি এবার সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায়ও একটি চামড়া কিনেছেন। পরে বিক্রি করতে পারবেন কি না, জানেন না। তবে চামড়াটি ভালো।
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এবার এক হাজারেও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কল্যাণ চৌধুরী বলেন, চামড়ার ব্যাপারে তাঁরা আগেই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেছেন। তাঁরা মাঠপর্যায়ে তদারকি করছেন। বিসিকও এটি দেখছে।