এমটিএফই-ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত কেশবপুরের দুই হাজার মানুষ

এমটিএফইর যশোরের কেশবপুর কার্যালয়। অ্যাপ বন্ধ হওয়ার পর থেকে কার্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেছে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের কেশবপুরে অনলাইন অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জের (এমটিএফই) মাধ্যমে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন অন্তত দুই হাজার গ্রাহক। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রলোভনে পড়ে গ্রাহকেরা বিনিয়োগ করে সর্বস্ব হারিয়েছেন। এখন লোকলজ্জার ভয়ে তাঁরা মুখ খুলছেন না।

কেশবপুর শহরের ত্রিমোহিনী মোড়ে একটি পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে এমটিএফই কার্যক্রম শুরু করে। জামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি প্রথমে এটি শুরু করেন। তিনি সাতক্ষীরার বাসিন্দা বললেও তাঁর পুরো ঠিকানা কেউ জানেন না। দুই বছর আগে তিনি শহরের আবদুল ওহাব মার্কেটে একটি জুয়েলারির দোকান দেন। তাঁর মাধ্যমে অনেকেই এমটিএফইতে বিনিয়োগ করেন।

আরও পড়ুন

রাতারাতি বিপুল অর্থের মালিক হওয়া যাবে—এমন প্রলোভনে পড়ে কেশবপুরের বেকার যুবক, শিক্ষক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এমটিএফইতে বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগকারীদের অনেকে লাভও পেয়েছেন। বর্তমানে এমটিএফইর অ্যাপটি বন্ধ আছে। অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন।

প্রতারণার শিকার একজন বিনিয়োগকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি অনলাইন ব্যবসা। অ্যাপের মাধ্যমে এমটিএফই ব্যবসা পরিচালনা করত। এতে গ্রাহক বাড়ানো খুব সহজ। কারণ, একজন গ্রাহক আরেকজন গ্রাহককে সদস্য করতে পারলে তিনি লাভবান হন। ৩০ থেকে ৪০ জন গ্রাহক করতে পারলে তিনি টিম লিডার বা সিইও হওয়ার সুযোগ পান। তখন তিনি নানা সুবিধা পান।

আরও পড়ুন

ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গ্রাহকদের মুখ না খোলার কারণ জানতে চাইলে একজন গ্রাহক বলেন, ‘এমনিতেই টাকা খোয়া গেছে। তার ওপর অনেক রকমের ঝামেলা হতে পারে। লোকলজ্জারও ভয় আছে।’

কেশবপুরে দুজন টিম লিডার ওই প্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁরা হলেন কেশবপুর বাহারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক সদরুল হক ও ব্যবসায়ী মাহাবুর রহমান। তবে সদরুল হক টিম লিডার নন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, তিনি মোটরসাইকেল পাননি। তাঁর অধীনে ৩০-৪০ জন গ্রাহক নেই। তবে তাঁর পরিবারের ৬-৭ জন গ্রাহক ছিলেন। তিনি ৪ লাখ টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে গ্রাহক হন। তিনি ভুল করেছেন বলে জানান।

আরও পড়ুন

অন্য টিম লিডার মাহাবুর রহমানের ফোন বন্ধ। সাত দিন ধরে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী জাকারিয়া বলেন, তিনি কয়েক দিন আসছেন না। এমন আরও কয়েকজন টিম লিডারের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাঁদের কেউ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী। ঘটনার পর কেউ ফোন বন্ধ রেখেছেন, কেউবা গা ঢাকা দিয়েছেন।

কেশবপুর কার্যালয়ের সিইও জামাল হোসেন এক মাস ধরে গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর জুয়েলারি দোকানও বন্ধ। গ্রাহকেরা জানান, জামালের অধীনে দুই হাজার গ্রাহক ছিল। তিনি সবচেয়ে লাভবান হয়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনও বন্ধ। হোয়াটসঅ্যাপেও তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহকদের দাবি, তাঁকে ধরা গেলে প্রতারণার তথ্য পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, এমটিএফইর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। এমনকি মুঠোফোনেও কেউ কিছু বলেননি। ফেসবুক বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে এমটিএফই কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গেলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।