শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে সখ্য থাকা সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখের বিচারের দাবি
চাঁদাবাজি ও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে গাড়িতে আগুন এবং ঘরবাড়ি ভাঙচুরের দুটি মামলায় নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ (৩৭) ও তাঁর অনুসারী আবদুর রাজ্জাককে (৩৯) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলার ধোপাখোলা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বুধবার সকালে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ ও তাঁর অনুসারীদের বিচারের দাবিতে গোবরা বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা বলেন, কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে উজ্জ্বল শেখের। সেই প্রভাব দেখিয়ে উজ্জ্বল তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে চাঁদাবাজি, ভূমি দখল, দোকানপাট দখল, নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে হামলাসহ নানা অপকর্ম করেছেন। তাঁর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ওই এলাকার সাধারণ মানুষ।
যে মামলায় সম্প্রতি উজ্জ্বল শেখ গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেই মামলার বাদী গোবরা গ্রামের নিউটন গাজী মানববন্ধনে বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে নির্বাচনে আনারস প্রতীকের জন্য কাজ করার কারণে উজ্জ্বল শেখ আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছে।
একপর্যায়ে আমার বাড়িতে হামলা করে পরিবারের লোকজনকে মারধর করে, একটি প্রাইভেট কার পুড়িয়ে দেয়। এই এলাকার সাধারণ মানুষকে উজ্জ্বল শেখ শিমুল ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীর ভয় দেখিয়ে জায়গাজমি দখল, হামলাসহ হত্যার হুমকি দেয়। আমরা উজ্জ্বলের বিচার চাই।’
উজ্জ্বল শেখের নির্যাতনের শিকার এক নারী বলেন, ‘কয়েক মাস আগ আমাদের জমিতে সাইনবোর্ড টাঙাচ্ছিলেন উজ্জ্বল। আমি বাধা দিতে গেলে আমার মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় আমি পড়ে গেলে উজ্জ্বলের সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে বেধড়ক মারপিট করে কাছে থাকা স্বর্ণালংকার কেড়ে নেয়।’
এদিকে চরমপন্থী সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মিলেছে তাঁরই ফাঁস হওয়া একটি অডিও ভয়েস ক্লিপে। ক্লিপটি প্রথম আলোর হাতে এসেছে। ওই ভয়েস মেসেজে উজ্জ্বল শেখ তাঁর এক আত্মীয়কে বলছেন, ‘এমপি আনার হত্যার নেতৃত্বে থাকা শিমুল ভূঁইয়ার স্ত্রী, সন্তান ও ঘনিষ্ঠ একজন তাঁর গোবরার বাড়িতে রয়েছেন। আমি যদি এখন কোনো ঝামেলা করি, আমার বাড়িতে পুলিশ যাবে। এরা বিশ্বাস করে আমার বাড়িতে আছে (শিমুলের স্ত্রী-সন্তান), আমার বাসায়। কিন্তু ধৈর্য আর থাকতেছে না ভাই। আপনি একটা ব্যবস্থা করেন। কয় দিন সহ্য করব। আর ভাবি (শিমুলের স্ত্রী) চার–পাঁচ দিনের মধ্যে আমার বাসা থেকে যদি চলে যায়, ঝামেলা হালকা হয়ে গেলে আর ছাড় দেওয়া হবে না।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গত সোমবার তাঁর নামে একটি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। পরের দিন গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে গাড়ি পোড়ানো ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় উজ্জ্বল শেখকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দুটি চলমান মামলায় সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল ও তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভয়েস ক্লিপটির ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ।