বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন
অবৈধভাবে বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের সভাপতির পদ দখল ও ক্লাবের সম্পদ নষ্টের অভিযোগে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলার আবেদনে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদককেও বিবাদী করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বরিশাল সদর জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ও নগরের দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা মফিজুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে আবেদনটি করেন। আদালতের বিচারক মো. হাসিবুল হাসান আদেশের জন্য আবেদনটি অপেক্ষমাণ রেখেছেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. বায়জিদ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার প্রধান বিবাদী করা হয়েছে সাদিক আবদুল্লাহকে। তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এবারের সিটি নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। বিপরীতে মনোনয়ন পাওয়া তাঁরই ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ১২ জুন অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের সাদিকবিরোধী শিবির সক্রিয় হতে শুরু করে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, মামলায় দুজনকে বিবাদী করা হলেও শুধু ১ নম্বর বিবাদী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অপর বিবাদী হলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের গঠনতন্ত্রের আর্টিকেল ৩২-এর ক-ঘ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, দুই বছর অন্তর বার্ষিক সাধারণ সভায় স্থায়ী ও আজীবন সদস্যদের ভোটে সভাপতি বা চেয়ারম্যান এবং ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হবে। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সভাপতি বা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে হলে সদস্য পদের বয়স অন্তত ১০ বছর এবং পরিচালক পদে নির্বাচন করার জন্য ন্যূনতম ৫ বছর হওয়ার বিধান রয়েছে। গঠনতন্ত্রে এমন নিয়ম থাকলেও সাদিক আবদুল্লাহ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। ১ নম্বর বিবাদী সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের সদস্য হন। তাঁর সদস্য নম্বর ৬৭৬। সেই হিসেবে গঠনতন্ত্রের আর্টিকেল ৩২ (খ) ধারার বিধান অনুযায়ী সাদিক আবদুল্লাহর সদস্য পদ নেওয়ার বয়স ১০ বছর পূর্ণ হবে আগামী ২০২৬ সালের ১৯ আগস্ট। এর আগে তাঁর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি গঠনতন্ত্রের ধারা লঙ্ঘন করে ২০১৯ সালের ৮ মার্চ বেআইনি এবং অবৈধভাবে সভাপতির পদ দখল করেন।’
আবেদনে বলা হয়, ‘১ নম্বর বিবাদী বেআইনিভাবে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বরিশাল ক্লাবের গেস্টহাউসে থাকার ব্যবস্থা করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কক্ষভাড়া ও ক্যাফেটেরিয়ার বিল পরিশোধ না করায় ক্লাবের কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। যার দায়ভার বাদীসহ ক্লাবের সদস্যদের বহন করতে হচ্ছে।’
এ ছাড়া সাদিক আবদুল্লাহর ক্লাবের স্বার্থ পরিপন্থী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ করে বাদী উল্লেখ করেছেন, ১ নম্বর বিবাদীকে বেআইনি ও অবৈধ কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য এবং পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য বহুবার অনুরোধ করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও ৭ জুলাই তিনি পদ ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আর তাই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।
মামলার বিষয়ে সাদিক আবদুল্লাহর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি বরিশাল ক্লাব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। এমনকি বিষয়টিকে ক্লাব ও সভাপতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।