ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে অবৈধভাবে চলছে ট্রলার, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

এসব অনিয়ম বন্ধের দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় ব্যক্তিরা মানববন্ধন ও পথসভা করেছেন।

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে অবৈধ নৌযান চলাচল ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের দাবিতে স্থানীয়রা মানববন্ধন করেছেন। গত মঙ্গলবারপ্রথম আলো

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে অবৈধভাবে ট্রলার চলাচল করছে। এ ছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে ইলিশা ঘাট ইজারাদার ট্রলার ভিড়তে দিচ্ছেন। এ ছাড়া ঘাটের ইজারাদার মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায়ের পাশাপাশি তাঁদের হয়রানি করছেন।

এসব অনিয়ম বন্ধের দাবিতে গত মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের ভোলা অংশে ইলিশা ইসলামিয়া মডেল কলেজের সামনে স্থানীয় ব্যক্তিরা মানববন্ধন ও পথসভা করেছেন।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ইলিশা ঘাট থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ফেরি, সিট্রাক ও লঞ্চ চলাচলের পাশাপাশি ছোট-বড় ট্রলারে যাত্রীরা চলাচল করছে। প্রতিটি ট্রলার, ফেরি আর লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়। নৌযানে উঠতে যাত্রীরা মেঘনার তীরে ব্লকবাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সমুদ্র আইন অনুযায়ী ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর-এই ৭ মাস ভোলার মেঘনা নদীতে সি-সার্ভে সনদধারী নৌযান ছাড়া কোনো নৌযান যাত্রী বহন করতে পারবে না। অর্থাৎ এ রুটে ট্রলার চলাচলের কোনো অনুমতি নেই।

দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা বলেন, ঈদের আগে-পরে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে চলাচলকারীদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এ নৌপথে যে পরিমাণ নৌযান চলাচল করার কথা, তা করছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁদের ট্রলারে চলাচল করতে হচ্ছে। এ নৌপথে সব সময় বেশি ভিড় থাকে। তবে ঈদের আগে-পরে প্রতি ঘণ্টায় লঞ্চ কিংবা সিট্রাক ছাড়া দরকার। সেখানে চলছে চারটি সিট্রাক ও দুটি লঞ্চ। এসব লঞ্চ-সিট্রাক প্রতিদিন মাত্র একটি রাউন্ড ট্রিপ দিচ্ছে। অর্থাৎ একবার ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাট ঘাটে যাচ্ছে। যাত্রী নিয়ে আবার ভোলার উদ্দেশে চলে আসছে। ভাড়াও নিচ্ছে বেশি।

লঞ্চের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। চরের কারণে একটু ঘুরে যাওয়ার জন্য আপাতত দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার হিসাব করা হচ্ছে। সরকারি হিসাবে ৪৬ কিলোমিটারের ভাড়া ১২৭ টাকা। লঞ্চ ও সিট্রাকের মালিকেরা ২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। আর ট্রলারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।

আইন অনুযায়ী ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর-এই ৭ মাস ভোলার মেঘনা নদীতে সি-সার্ভে সনদধারী নৌযান ছাড়া কোনো নৌযান যাত্রী বহন করতে পারবে না। অর্থাৎ এ রুটে ট্রলার চলাচলের কোনো অনুমতি নেই।

কেন বেশি ভাড়া নিচ্ছেন? জানতে চাইলে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের লঞ্চমালিক ও মালিক নেতা মো. আফসার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘ভাই, আমি অসুস্থ, কথা বলতে পারছি না। পরে কথা বলব, বলে ফোন রেখে দেন।’ 

ট্রলারমালিকেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ট্রলার থেকে যাত্রীপ্রতি যে ভাড়া নেন, সে টাকার তিন ভাগের এক ভাগ নেন ইজারাদার। এ জন্য তাঁদের বেশি ভাড়া আদায় করতে হচ্ছে।

ঘাট ইজারাদার হোসেন শহীদ সরোয়ারদি বলেন, তাঁরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সব আইনকানুন মেনেই ঘাট পরিচালনা করছেন। তাঁরা কোনো অবৈধ নৌযান চালাচ্ছেন না। যাঁরা অবৈধ যানবাহন চালাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোনো লেনদেন নেই।

হয়রানি বন্ধের দাবি

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তারা বলেন, ইলিশা লঞ্চঘাটের ইজারাদার সদর উপজেলা ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হোসেন শহীদ সরোয়ারদি যাত্রীদের অবৈধ নৌযানে লক্ষ্মীপুর পাঠাচ্ছেন। এসব খোলা ট্রলারে যাত্রীরা বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে ও ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এ ছাড়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৫ টাকার ঘাট টিকিটের পরিবর্তে ১০ টাকা নিচ্ছেন। যাত্রীদের কাছে টিকিটের দাম বেশি নেওয়া ছাড়াও যাত্রীদের হাতে বহন করা ব্যাগের জন্য আলাদা টোল দিতে হচ্ছে ইজারাদারের লোকজনকে। এ ছাড়া লঞ্চেও কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রায়ই চুরি হয়।

বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে বিভিন্ন অনিয়ম দূর করতে তাঁদের অভিযান অব্যাহত আছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁরা ঈদের আগে-পরে সাতটি লঞ্চের জরিমানা করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত ইজারাদারের বিরুদ্ধে ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকা নেওয়ার প্রমাণ পেয়ে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছেন।