কিশোরগঞ্জে গ্রাহকদের ‘২০ কোটি টাকা’ নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ‘উধাও’

গত রোববার থেকে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বোর্ড বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখাটি তালাবদ্ধ রয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় গ্রাহকের প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তা মো. আলমগীর উধাও হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত রোববার থেকে উপজেলার বোর্ড বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখাটি তালাবদ্ধ আছে। খোঁজ মিলছে না অংশীদার ও এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থাপকের। কিন্তু এই আউটলেট বন্ধ থাকায় নিজেদের গচ্ছিত টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক শ গ্রাহক।

হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজন গ্রাহক ইতিমধ্যে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ আলমগীর ও তাঁর সহযোগীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাঁদের সবার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী গ্রাহক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দশক ধরে উপজেলার হুগলাকান্দি গ্রামের আলমগীর তাঁর অংশীদার বীর কাটিহারি গ্রামের মানিক মিয়াকে নিয়ে বোর্ড বাজারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করেছেন। ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় হুগলাকান্দি গ্রামের রিটন মিয়াকে। ভালো আচরণের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেন আলমগীর। একপর্যায়ে স্থায়ী আমানত বা ডিপিএস এক লাখ টাকা জমার বিপরীতে মাসে এক হাজার টাকা সুদ দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এতে গ্রামবাসীরা ডিপিএসে আগ্রহী হন। এসব ডিপিএস রাখার সময় আলমগীর তাঁদের চেক দেন। বর্তমানে আলমগীরসহ সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এই এজেন্ট শাখায় চর হাজীপুর গ্রামের সৌদিপ্রবাসী রতন মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তার স্বামীর পাঠানো ২৭ লাখ টাকা আমানত রেখেছিলেন। হুগলাকান্দি গ্রামের আবদুল মোতালিব রেখেছিলেন সাড়ে ১৫ লাখ টাকা, একই গ্রামের আবুল কাসেম রেখেছিলেন ১৪ লাখ টাকা। গত তিন দিন তাঁরা বোর্ড বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় চেকসহ গিয়ে কাউকে পাননি। সবার মুঠোফোন বন্ধ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক সরকার আবু মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংক শাখায় কেউ যদি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে, তাহলে মূল শাখায় এর সব দায়দায়িত্ব থাকে। এতে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু হোসেনপুর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যেটা হয়েছে, সেটা হলো তাঁরা (গ্রাহক) আলমগীরের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে লেনদেন করেছেন। তাঁরা (ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) এর দায়দায়িত্ব নেবেন না।’

ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, এই এলাকার অনেকের স্বজনই প্রবাসী। তাঁদের পাঠানো টাকা এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় জমা করেছিলেন ডিপিএস হিসেবে। সেই টাকার ওপর প্রতি লাখে এক হাজার টাকা সুদও পাচ্ছিলেন। কিন্তু রোববার থেকে শাখাটি তালাবদ্ধ করে এজেন্ট উধাও হয়ে গেছেন।

এ নিয়ে গতকাল বুধবার প্রথম আলোর এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় প্রতারণার শিকার কয়েকজন গ্রাহকের। তাঁরা সবাই নিজেদের টাকা রাখার প্রমাণ হিসেবে এজেন্ট আলমগীরের স্বাক্ষর করা চেক দেখান। তাঁদের দাবি, হোসেনপুরসহ আশপাশের প্রায় ৪০০ গ্রাহকের ২০ কোটির বেশি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এজেন্ট আলমগীর ও তাঁর সহযোগীরা।

ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রোকন উদ্দিন বলেন, সোমবার থেকে বোর্ড বাজারের এজেন্টের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বন্ধ আছে। এজেন্ট আলমগীর তাঁর ব্যক্তিগত নথিপত্র দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। গ্রাহকেরা স্থায়ী আমানত বা ডিপিএস অ্যাকাউন্টে টাকা রেখেছেন। টাকা ব্যাংক থেকে তোলার জন্য এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দরকার হয়। কিন্তু আলমগীর, তাঁর অংশীদার ও এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থাপক উধাও হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকেরা চেক হাতে ঘুরলেও টাকা তুলতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগ পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয় জিনারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, আলমগীর ব্যবসার সুবাদে এলাকায় মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলেন। সরলমনা মানুষের সঙ্গে তিনি এভাবে প্রতারণা করবেন, তা কেউ ভাবতে পারেনি।

হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিন্দ মণ্ডল জানান, বিষয়টি তিনি শোনা মাত্রই তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। আর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, অভিযোগ জানার পর ইউএনও ও ওসিকে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।