বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাসের সনদ আনতে যাচ্ছিলেন আফসানা মিমি (২৬)। এ জন্য ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। মা কানিজ ফাতেমা তাঁকে বাসে উঠিয়ে বিদায় দেন। ‘এই বিদায় যে শেষ বিদায় হবে, তা কে জানত’ বলতে বলতে বুক চাপড়ে আহাজারি করছিলেন আফসানা মিমির মা কানিজ ফাতেমা।
রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের হীরাবাড়ি রোডে আফসানা মিমির বাসায় গিয়ে দেখা যায়, কানিজ ফাতেমা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কারও সান্ত্বনাই শান্ত করতে পারছে না তাঁকে। একপর্যায়ে এই প্রতিবেদককে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠে প্রশ্ন করেন, ‘এভাবে রাস্তায় (সড়ক দুর্ঘটনায়) আরও কত মায়ের কোল খালি হবে?’
আফসানা মিমি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যান তত্ত্ব বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। আজ সকালে মা কানিজ ফাতেমা ও ছোট বোন রূপা গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে থেকে আফসানাকে ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে উঠিয়ে দিয়ে যান। বাসায় ফিরতে ফিরতে শোনেন তাঁর প্রাণের ধন আর নেই।
আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একজন আফসানা মিমি।
কিছুক্ষণ পরপরই বিলাপ করে কাঁদছিলেন কানিজ ফাতেমা, ‘যে মেয়েকে নিজে এগিয়ে দিয়ে এলাম তাঁকে আর কোনো দিন ফিরে পাব না, আল্লাহ, আমি কীভাব থাকব এখন, কাকে নিয়ে বাঁচব।’
কানিজ ফাতেমার কান্না তাঁদের হীরাবাড়ি রোডের বাসায় আসা অনেককেই কাঁদিয়েছে। আফসানা মিমির ছোটবোন স্কুলছাত্রী রূপা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ছোটবেলাই তাদের বাবা আবু হেনা মোস্তফা কামাল মারা যান। মা কানিজ ফাতেমা বাবা-মায়ের ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন তাদের দুই বোনকে। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছেন। রূপা বলে, ‘কত স্বপ্ন ছিল আমার মায়ের। আপু তুমি কোথায়? কে পূরণ করবে আমাদের স্বপ্ন?’