বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত বানারীপাড়ার রাকিবের লাশ তুলে ময়নাতদন্তের উদ্যোগ

নিহত রাকিব ব্যাপারীছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত রাকিব বেপারীর (২১) লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিহত হওয়ার সাড়ে চার মাস পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের কবরস্থান থেকে লাশটি তোলা হয়। পরে তা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

লাশ কবর থেকে তোলার সময় বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বায়েজিদ উর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের সিআইডির পরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন, বানারীপাড়া থানার উপপরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম উপস্থিতি ছিলেন।

বানারীপাড়ার ইউএনও বায়েজিদ উর রহমান বলেন, রাকিব নারায়ণগঞ্জে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কবর থেকে তাঁর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্ত শেষে আবার দাফন করা হবে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সিআইডির পরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, রাকিবের মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটনে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, রাকিব নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন। রাকিবের মা রাশিদা বেগম হৃদ্‌রোগে অসুস্থ, বড় ভাই শাকিল প্রতিবন্ধী। মারা যাওয়ার মাসখানেক আগে বরগুনার আমতলী উপজেলার জান্নাতুল আক্তারের (১৮) সঙ্গে রাকিবের বিয়ে হয়। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় কর্মস্থলের কাছে রাকিব মা, বাবা, ভাই ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুলাই সকালে রাকিব ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকায় বাজার করতে বেরিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিন দুপুরে ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে গিয়ে রাকিবের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর বাবা মোশারেফ হোসেন। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়া ওই দিন রাতেই বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের বাড়িতে আনা হয় তাঁর লাশ। ২২ জুলাই সকাল ১০টায় বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রাকিবের বাবা মোশারেফ হোসেন জানান, তাঁদের দরিদ্র পরিবারে রাকিবই ছিলেন মূল ভরসা। তিনি দিনমজুরি করে যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চলে না। গ্রামের বাড়ি বানারীপাড়ার জম্বদ্বীপ গ্রামে তাঁদের কোনো ঘর নেই। গ্রামের বাড়িতে ঘর বানিয়ে তাঁদের রাখার স্বপ্ন ছিল রাকিবের। কিন্তু গুলিতে সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে।