সাঁথিয়ায় কাঁচা মরিচের ফলনে বিপর্যয়, দাম বেড়েই চলেছে

সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে কাঁচা মরিচ কিনে আড়তে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে তোলাছবি: প্রথম আলো

দুই থেকে পাঁচ কেজি করে কাঁচা মরিচ নিয়ে হাটে বসে আছেন কয়েক চাষি। তাঁদের সংখ্যাও কম; বড়জোর ১৫ থেকে ২০ জন। অথচ এ সময়ে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে চাষিদের আনাগোনা থাকে বেশি, মরিচের সরবরাহও হয় প্রচুর। এবারের মৌসুমে এ অঞ্চলে মরিচের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ কারণে মরিচের দামও বেড়েছে।

দেশের অন্যতম কাঁচা মরিচ উৎপাদনকারী এলাকা সাঁথিয়া উপজেলা। তবে এবার প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে এ উপজেলায় মরিচের উৎপাদন অনেকাংশে কমেছে। সরেজমিনে উপজেলার ছেঁচানিয়া, তেঘরি, বরাটসহ বিভিন্ন গ্রামের ঘুরে দেখা গেছে, খেতে মরিচের ফলন খুব কম। কোনো কোনো খেতে ফুল দেখা গেলেও মরিচ তেমন ফলেনি।

তেঘরি গ্রামের মরিচচাষি রফিকুল ইসলাম তাঁর মরিচখেত দেখিয়ে বলেন, ‘প্রথমবারের তীব্র খরায় মরিচগাছগুলো কুঁকাড়ায়া গেছিল। তারপর কয়েক দিন কিছুটা ভালো থাকার পর আবারও খরা শুরু হইছে। গাছে ফুল আসতেছে, কিন্তু তাতে মরিচ হতেছে না। এ পর্যন্ত আমার জমির থ্যা এক কেজি মরিচও তুলব্যার পারি নাই। এই এলাকার সব মরিচখ্যাতেরই একই অবস্থা।’

চাষিরা বলছেন, মরিচ উৎপাদনের ভরা এ মৌসুমে ফলনে বিপর্যয়ের কারণে বাজারে খুব অল্প মরিচ উঠছে। এর প্রভাবে গত বছরের মতো এবারও কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে চলছে। চতুরহাটে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এবার সাঁথিয়া উপজেলায় ২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৩১৫ টন শুকনা মরিচ ও ২৫ হাজার ২৬০ টন কাঁচা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

স্বাভাবিক ফলন হলে এই সময়ে হাটে কমপক্ষে এক হাজার কেজি কাঁচা মরিচের সরবরাহ হতো বলে জানান ‘নিউ পাবনা বাণিজ্যালয়’ নামের একটি আড়তের মালিক আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, ‘এ সময় মরিচের দামও সাধারণত ১০ থেকে ১২ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু আজ (শনিবার) হাটে সব মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০ মণ মরিচের আমদানি হয়েছে।’

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, এবার উপজেলাটিতে ২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৩১৫ টন শুকনা মরিচ ও ২৫ হাজার ২৬০ টন কাঁচা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সাঁথিয়ার কৃষক ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মরিচের আবাদ শুরু হয় হয় মার্চের শুরুতে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত খেত থেকে মরিচ পাওয়া যায়। আর মে মাসের শুরু থেকে গাছে মরিচ আসতে শুরু করে। সেই হিসাবে এখন মরিচ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। সাধারণত এই সময়ে মরিচের ফলন বেশি হয়; প্রতি কেজির দাম ৮ থেকে ১০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু গত বছরের মতো চলতি বছরেও খরার কারণে মরিচের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি মরিচের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। গত বছর জুন মাসের শেষ দিকে প্রতি কেজির দাম আরও বেড়ে যায়। চলতি বছরও কাঁচা মরিচের ফলনে এমন বিপর্যয় অব্যাহত থাকলে গত বছরের মতো অস্বাভাবিক দাম দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে মরিচগাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ অবস্থায় কৃষকদের সেচ ও প্রয়োজনীয় সার দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সঞ্জীব কুমার গোস্বামী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, সাঁথিয়া

উপজেলার বরাট গ্রামের চঞ্চল সরদার নিজের উৎপাদিত মরিচ নিয়ে আসেন চতুরহাটে। তিনি জানান, এবার এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। মরিচগাছে খুব একটা মরিচ ধরছে না। অন্যান্য বছর এই সময়ের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই মরিচ তোলা শুরু করেছেন। কিন্তু এবার দুই দিন ধরে মাত্র সাত কেজি মরিচ তুলে প্রথম বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে এসেছেন। বাজারে মরিচের দাম বেশি থাকলেও ফলন কম। লাভের দেখা নেই বলে তিনি জানান।

বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। তাঁরাও চাহিদা মাফিক মরিচ পাচ্ছেন না। হাটটির কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী আবদুল আলিম বলেন, ‘আজ (শনিবার) হাটবার। তবু বাজারে খুব একটা মরিচ উঠতেছে না। আমার দুই হাজার কেজি মরিচের দরকার থাকলেও দুপুর পর্যন্ত মাত্র তিন শ কেজি কিনব্যার পারিছি।’

এসব বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘অঞ্চলটিতে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে মরিচগাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ অবস্থায় কৃষকদের সেচ ও প্রয়োজনীয় সার দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে এমনিতেই ফলন বেড়ে যাবে বলে আশা করছি।’