‘রিকশাটি পেয়ে অনেক ভালো লাগছে, দুবেলা দুমুঠো খেতে পারব’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হোটেলকর্মী মো. সাগর (২৪)। চিকিৎসার খরচ জোগাতে পরিবারের আয়ের একমাত্র সম্বল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি বিক্রি করে দেন তাঁর বাবা আলতাফ হোসেন। সংসারের খরচ ও সাগরের ওষুধ কেনা নিয়ে পরিবারটির দুশ্চিন্তায় দিন কাটছিল। তবে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের সহায়তায় পরিবারটির জন্য একটি অটোরিকশা কিনে দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সাগরের বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয় ছয় আসনবিশিষ্ট নতুন ব্যাটারিচালিত রিকশাটি। আলতাফ হোসেনের হাতে রিকশার চাবি তুলে দেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক মো. জাকির হোসেন, ছাত্র প্রতিনিধি রব্বানী, সিয়াম, সালমান, রিফায়েত, নাজমুল প্রমুখ।
সাগরের বাড়ি উপজেলার কাঁকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের গাবুয়া গ্রামে। ঢাকার মিরপুরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতেন তিনি। পুলিশ ও পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র-জনতার মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন সাগর। তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাস তিন দিন পর চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলে বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন শুকায়নি। শরীরে অসংখ্য রাবার বুলেটের ক্ষত। বাঁ হাত অচল হয়ে গেছে। চোখে ঝাপসা দেখেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে কষ্ট তাঁর।
পরিবারটি আয়ের শেষ সম্বল রিকশাটি বিক্রি করে অসহায় হয়ে পড়েছিল। উচ্চ মূল্যের বাজারে সংসারের খরচ ও ছেলের ওষুধ কেনা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটছিল। ধারদেনা করে ও অন্যের সাহায্য নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন।
গত ১৭ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর হৃদয়বান-বিত্তবানদের কয়েকজন সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাগরের বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয় ছয় আসনবিশিষ্ট নতুন একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা। আয়ের অবলম্বন ফিরে পেয়ে হাসি ফুটেছে সাগরের পরিবারে।
সাগর ও তাঁর পরিবারের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে ১৭ অক্টোবর প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে ‘চিকিৎসার জন্য রিকশা বিক্রি করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে গুলিবিদ্ধ সাগরের পরিবার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই ইউএনওর মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচ হিসাববিজ্ঞান-৯৩ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে সাগরের পরিবারকে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। পরে মির্জাগঞ্জের বাসিন্দা ও রাজধানীর একটি হাসপাতালের চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল আজম রঞ্জ ২৫ হাজার এবং প্রবাসী সালাউদ্দিন (বাচ্চু মুন্সি) ৭০ হাজার টাকা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বাকি টাকা সংগ্রহ করে প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যে গুলিবিদ্ধ সাগরের বাবাকে চীনা মডেলের একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনে দেওয়া হয়।
সাগরের বাবা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ছেলে অসুস্থ হওয়ায় খুব কষ্টে দিন কাটছিল। ভাড়া রিকশা চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়ে সংসার চলত না। অনেক টাকা ধারদেনা হয়েছে। ছেলেটি এখনো সুস্থ হয়নি। প্রতি মাসে অনেক টাকার ওষুধ প্রয়োজন হয়। রিকশাটি পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেতে পারব।’
ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাগরের চিকিৎসা ও আর্থিক বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তা উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। তার পরিপ্রেক্ষিতে সাগরের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়।