এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বিএনপির দুই নেতার দ্বন্দ্ব, দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় দুই ভাই খুন হয়েছেন। আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের পারমল্লিকপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন পারমল্লিকপুর গ্রামের সামাদ শেখের ছেলে মিরান শেখ (৪০) ও জিয়ারুল শেখ (৩৮)। তাঁরা দুজনই কৃষিজীবী। দুজনই ধারালো অস্ত্রের কোপে ঘটনাস্থলে মারা যান। আহতদের মধ্যে মিরান ও জিয়ারুলের আপন ছোট ভাই ইরান শেখের (৩৬) অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। আহত অন্য দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন একই গ্রামের আরিফুজ্জামান (৩৬) ও অহিদ খাঁ (৪৬)।
লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা মারুফা তাসনিম প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পারমল্লিকপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ-সংঘাত চলছে। এর একপক্ষে নেতৃত্ব দেন এস এম ফেরদৌস রহমান। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মাহমুদ খান। ফেরদৌস রহমান জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মাহমুদ খান লোহাগড়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি। কয়েক দিন আগে পারমল্লিকপুর গ্রামের শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবীরের বাগানের ২৫টি চারাগাছ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা কেটে নিয়ে যায়। জাহাঙ্গীর কবীর যুবদল নেতা মাহমুদ খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
গাছ কাটার ঘটনার জন্য প্রতিপক্ষের লোকজনকে দায়ী করেন জাহাঙ্গীর। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তিন দিন ধরে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন উত্তেজনা প্রশমনে বৈঠক করছিলেন। আজ সকালেও দুই পক্ষের সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। এ পরিস্থিতিতে পারমল্লিকপুর দক্ষিণপাড়ায় মাহমুদ খান পক্ষের লোকজন ফেরদৌস খান পক্ষের লোকজনের ওপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের কোপে মিরান শেখ ও জিয়ারুল শেখ গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁদের মৃত্যু হয়। নিহত দুজন ফেরদৌস রহমান পক্ষের। আহত অহিদ খাঁ মাহমুদ খান পক্ষের।
এস এম ফেরদৌস রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাহমুদ খান পক্ষের সঙ্গে তাঁদের গ্রাম্য বিরোধ আছে। আজ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তাঁদের লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে। মাহমুদ খান পক্ষের লোকজন আত্মগোপনে চলা যাওয়ায় হামলার অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী সুলতানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এটি বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব নয়। দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। তারই জের ধরে ওই সংঘর্ষ হয়েছে।
এই বিষয়ে লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। হামলাকারীদের আটকের চেষ্টা চলছে।