কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিপক্ষে যাওয়ায় ১৫ নেতাকে শোকজ
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ১৫ নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠি (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই নেতাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অধিকাংশ নেতা চিঠি হাতে পেলেও আজ শনিবার তা জানাজানি হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে জবাব না দিলে একতরফাভাবে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিঠি পাওয়া বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা দুই নেতার স্বেচ্ছাচারিতা। তাঁরা সংগঠনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েছেন। এর কোনো ভিত্তি নেই। এতে প্রতিবাদ থামবে না।
কারণ দর্শানোর চিঠিতে বলা হয়, ‘৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন ও ঘোষণা দিয়েছেন। অনুমোদিত কমিটি এবং নেতাদের বিরুদ্ধে আপনি অগঠনতান্ত্রিক, বেআইনি, উচ্ছৃঙ্খল ও হঠকারিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে “দায়িত্বজ্ঞানহীন তথাকথিত কর্মসূচিতে” বারবার অংশ নিয়ে অসত্য, বিদ্বেষপূর্ণ, অশালীন ও হুমকিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন।’ এটিকে গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন–অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না। এরপর কমিটি ভেঙে দিতে একাধিকবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে আহ্বায়ক কমিটিতে থাকা কয়েকজন নেতাও অংশ নেন। ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে কমিটি ভেঙে দিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তাঁরা। সর্বশেষ ১৭ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিতে আবারও মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পদবঞ্চিতরা।
আন্দোলন থেমে থাকবে না মন্তব্য করে কারণ দর্শানোর চিঠি পাওয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটিতে দুর্দিনে দলের হাল ধরা অনেক নেতা-কর্মীর জায়গা হয়নি। অযোগ্যদের বাদ দিয়ে দলের পাশে থেকে দলের জন্য যাঁরা ত্যাগ শিকার করেছেন, তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করতে আন্দোলন করেছি। ওই শোকজ চিঠির কোনো প্রশাসনিক গ্রহণযোগ্যতা নেই।’
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ আহ্বায়ক কমিটির এখতিয়ারভুক্ত। যাঁরা দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের শোকজ করা হয়েছে এবং জবাব দিতে বলা হয়েছে। এমন সম্ভাব্য ১৫ জন হতে পারেন। এটা কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা না। তবে যাঁরা নোটিশের জবাব দেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে বিএনপির তৃণমূলে বিভেদ বাড়তে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘তারা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। তাই আমি মনে করি না এতে দলীয় বিভেদ তৈরি হতে পারে।’