নিজের রেকর্ড ভাঙতে ফুটবল মাথায় বাইসাইকেলে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিলেন মাগুরার হালিম
মাথার ওপরে ফুটবল, দুই হাত হ্যান্ডেলে। এভাবে এক ব্যক্তি বাইসাইকেল চালাচ্ছেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু করে তিনি থামলেন দুপুর ১২টা ১৯ মিনিটে। এ সময়ে ৭১ দশমিক ৯ মিটার ল্যাপে তিনি চক্কর দিলেন ২৮০ বার। যা হিসাব করে দেখা গেল, ওই ব্যক্তি ১ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট সময়ে বাইসাইকেল চালিয়েছেন টানা ২০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব। এর মধ্যে একবারও বল মাথা থেকে পড়েনি, তিনি হাত দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করেননি।
মাগুরা ইনডোর স্টেডিয়ামে শনিবার সকালে এই চিত্র দেখা গেল। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে এই কসরত দেখালেন মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের আবদুল হালিম (৪৯)। মাথার ওপর ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটা, বাইসাইকেল চালানো বা স্কেটিং করা তাঁর কাছে যেন কোনো ব্যাপারই নয়। ফুটবল নিয়ে যিনি অর্ধশতাধিক আকর্ষণীয় খেলা দেখাতে পারেন। এমন ফুটবল কসরত করেই ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
আবদুল হালিম বলেন, ‘ছোটবেলায় এক গোলকিপারের বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ দেখে এতে আগ্রহী হই। আজ প্রায় ৩৩ বছর ফুটবল নিয়ে নানা খেলা শিখেছি, প্রদর্শন করেছি। এটাই আমার পেশা। এটা করতে গিয়ে অন্য কোনো কাজ আর শেখা হয়নি।’
নিজেই ভাঙছেন নিজের রেকর্ড
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, ‘দ্য গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ট্রাভেল্ড অন এ বাইসাইকেল ব্যালান্সিং এ ফুটবল অন দ্য হেড’ বা মাথায় ফুটবল রেখে সাইকেল চালিয়ে সবচেয়ে বেশি দূর যাওয়ার রেকর্ডের মালিক আবদুল হালিম। ২০১৭ সালের ৮ জুন ঢাকায় এই রেকর্ড গড়েন তিনি। তখন ১ ঘণ্টা ১৯ মিনিটে মাথায় বল নিয়ে ১৩ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছিলেন তিনি। সাত বছরের বেশি সময় রেকর্ডটি তাঁর দখলেই রয়েছে।
এবার নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙতে চলেছেন তিনি। শনিবার আবদুল হালিম চালিয়েছেন ২০ দশমিক ৬ কিলোমিটার পথ। রেকর্ড স্থাপনের জন্য গিনেসের কিছু নিয়ম আছে। সে নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় পর্যায়ে একটি কমিটির সামনে মাগুরা ইনডোর স্টেডিয়ামে ফুটবল মাথায় নিয়ে সাইকেল চালান হালিম। যার ভিডিও ধারণ করা হয়। এই ভিডিও ফুটেজ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেগুলো যাচাই–বাছাই শেষে মিলবে স্বীকৃতি।
আবদুল হালিমের রেকর্ডের ভিডিও ধারণ করেন স্থানীয় সাংবাদিক মো. সুজন মাহামুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো ছোট একটি জায়গায় তিনি প্রায় দুই ঘণ্টা বল মাথায় নিয়ে এক রকমভাবে সাইকেল চালিয়ে গেলেন। খুব বিস্ময়কর লাগল, নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সাইকেল চালাতে চালাতে পানিও খেলেন। এমনকি শেষে তিনি বললেন চাইলে সারা দিন এভাবে মাথায় বল নিয়ে সাইকেল চালাতে পারবেন।’
গিনেস বুকে আবদুল হালিমের নাম প্রথমবার ওঠে ২০১১ সালে। ওই বছরের ২২ অক্টোবর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে বল মাথায় নিয়ে ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ হেঁটে রেকর্ড গড়েন তিনি। এই রেকর্ড অবশ্য এখন হাতছাড়া হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফায় ২০১৫ সালে গিনেসে নাম ওঠে তাঁর। ওই বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আবদুল হালিম মাথায় বল নিয়ে রোলার স্কেটিং করে ১০০ মিটার দূরত্ব ছুটে যান মাত্র ২৭ দশমিক ৬৬ সেকেন্ডে। এতেই আসে গিনেসের স্বীকৃতি।
কসরত দেখিয়ে চলে সংসার
৯০ দশকের শুরুতে ফুটবলের কসরত শেখার নেশা তৈরি হয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা আবদুল হালিমের। এর পর থেকে এটাই তাঁর পেশা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুটবলের কসরত দেখিয়ে যে সম্মানী পান, তা দিয়ে কোনোরকমে চলে সংসার। আগে যে তিনবার রেকর্ড করেছিলেন, তখন স্পনসর (পৃষ্ঠপোষক) ছিল। এবার নেই।
আবদুল হালিম বলেন, ‘স্পনসর থাকলে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়। একটা রেকর্ড করতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। চেষ্টা করলে আরও অনেক রেকর্ড আমি করতে পারব। কিন্তু অর্থকষ্টে কিছুই শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে না।’
ফুটবলের নানা কসরত দেখিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিচ্ছেন আবদুল হালিম। তাঁকে দেখে নতুন কেউ কি আগ্রহী হচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি গিনেসে নাম লিখিয়ে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনেছি। কিন্তু রাষ্ট্র কিন্তু আমাকে কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। আমার আর্থিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়নি। তাহলে নতুনেরা কেন শিখতে আগ্রহী হবে? আমরা তো চাই এই খেলা জনপ্রিয় হোক। তরুণদের শেখাতে পারলে আমাদেরও ভালো লাগবে, তবে এ জন্য দরকার সরকারি উদ্যোগ।’