কুমিল্লায় শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে পেটালেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে মাসুদুল ইসলাম ওরফে বাবু (৫২) নামের এক ঠিকাদারকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক দল কর্মীর বিরুদ্ধে। আজ সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে নগরের টমছমব্রিজ এলাকায় অবস্থিত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার মাসুদুল ইসলাম কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানার অনুসারী। মাসুদুল বর্তমানে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে রিন্টুর অনুসারী নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ঠিকাদারের। অভিযোগের বিষয়ে জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মাসুদুল ইসলামের বাসা কুমিল্লা নগরের ঠাকুরপাড়া জোড়পুকুরপাড় এলাকায়। তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে। ৩০ বছর ধরে তিনি ঠিকাদারি করছেন।
ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণে একচেটিয়া ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা-(সদর) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীনের অনুসারীরা। ২০১৯ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হন। এরপর তাঁর অনুসারীরা সেখানে ঠিকাদারি শুরু করেন। বর্তমানে আঞ্জুম সুলতানা সংসদ সদস্য নেই। কিন্তু তাঁর অনুসারী ঠিকাদারেরা কাজ করছেন।
ভুক্তভোগী ঠিকাদারের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে ঠিকাদার মাসুদুল কাজের বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যান। তখন তাঁর পিছু নেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলামের অনুসারীরা। ২০-২৫ জনের একটি দল তাঁকে পেছন থেকে ধরে ফেলে। তাঁরা মাসুদুলকে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে বেদম মারধর শুরু করেন।
মাসুদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা আমাকে সবাই লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী ইয়াছিন, সোহাগ, জালাল উদ্দিন আমাকে প্রথম মারা শুরু করেন। সবগুলো লাঠি তারা আমাকে মেরেই ভেঙেছে। এ সময় কয়েকজন আমার মুখে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। আমি দিশাহারা হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করি। ওনার সামনেই সেখানে আমাকে আবার মারধর করে। কেউ আমাকে বাঁচাতে আসেনি। পরে আমি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ি। সেখান থেকে কয়েকজন ধরে হাসপাতালে পাঠান।’
মাসুদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা চায় সিন্ডিকেট করে রাখতে। যেন কেউ কাজ না নিতে পারে। তারা আমাকে মারছিল আর বলছিল, ‘‘তোর এমপি কই? তোরে বাঁচাইতে আসতে বল। আর টেন্ডারের জন্য আসবি? তোদের বহুত সুযোগ দিছি। আর নাহ্। তার হাত–পা ভাঙ।’’ এ সময় সবাই আমার হাত–পায়ে আবার মারতে শুরু করে।’
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলী ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মাসুদুল ইসলামের স্ত্রী জিন্নাত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মাসুদুলের ডান হাত ও পা মারাত্মকভাবে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আইসিইউতে আছে। পুরো শরীরেও আঘাত রয়েছে।