জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি এবং বরখাস্ত হওয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের ছেলেকে সাত দিনেও ধরতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকর্মীর বয়ান ও স্বজনদের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাত ইট দিয়ে সাংবাদিক গোলাম রব্বানির মাথা থেতঁলে দিয়েছিলেন। তিনি এখন লাপাত্তা।
সাংবাদিক রব্বানির স্বজনেরা বলছেন, ইট দিয়ে গোলাম রব্বানির মাথা থেঁতলে দেওয়া ফাহিম ফয়সাল ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় তাঁরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সাত দিনেও তাঁর গ্রেপ্তার না হওয়া রহস্যজনক। তবে পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রিফাতের অবস্থান তাঁদের কাছে শনাক্ত হয়নি। ওই আসামি অনেক চতুর। তিনি কোনো ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি বা মুঠোফোন ব্যবহার করছেন না।
ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাত (২২) সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের বড় ছেলে। তিনি বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। গত শনিবার রিফাতকে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার পিস্তল হাতে তাঁর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ছবিটি পুরোনো।
রব্বানির বড় ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক শুরু থেকেই বয়ান দিচ্ছেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁর ছেলে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করেছেন। অনেকটাই প্রকাশ্যে তাঁরা আমার বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন। চেয়ারম্যানের ছেলে গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কে আছি।’
গোলাম রব্বানি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছিলেন তাঁর সহকর্মী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকর্মী আল মুজাহিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসীরা প্রথমে ব্যস্ততম এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে টেনেহিঁচড়ে সাংবাদিক রব্বানিকে নামায়। তাঁকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে মারতে অন্ধকার টিঅ্যান্ডটি সড়কে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছিল আরও ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী। সবাই মিলে রব্বানিকে পেটাচ্ছিল। দূর থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন প্রধান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম। একপর্যায়ে কেউ একজন লাথি মেরে পাশে থাকা একটি দেয়ালের ইট ভাঙেন। চেয়ারম্যানের ছেলে সেই ইট হাতে নিয়ে রব্বানির মাথায় আঘাত করেন।
১৪ জুন রাত ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়িতে ফিরছিলেন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি। বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান (বরখাস্ত) মাহমুদুল আলমের নেতৃত্বে তাঁর ওপর হামলা করে একদল সন্ত্রাসী। এ সময় তাঁকে টেনেহিঁচড়ে উপর্যুপরি কিল–ঘুষি ও বেদম মারধর করা হয়। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরদিন দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। গোলাম রব্বানি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি এবং একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত শনিবার দুপুরে সাংবাদিক গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে মাহমুদুল আলম, তাঁর ছেলে রিফাতসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রধান আসামি মাহমুদুলসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। গত রোববার তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, সত্যিকার অর্থে ওই আসামির অবস্থান এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তিনি কোনো ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির আওতার মধ্যে নেই। তাঁর অবস্থান কোনোভাবেই শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত আছে। একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে বিষয় ধরেও কাজ চলছে। ইতিমধ্যে আমরা তাঁর পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহের কাজ করছি। ইমিগ্রেশনে লিখিতভাবে জানানোর প্রস্তুতি চলছে।’