বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনকে দুই দিনেও উদ্ধার করা যায়নি। তিনি জীবিত নাকি মৃত—জানে না পরিবার। তাঁকে জীবিত ফেরত চান স্বজনেরা। তবে পুলিশ প্রশাসন বলছে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
নিজাম উদ্দিন সোনালী ব্যাংক রুমা উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক। গত মঙ্গলবার রাতে তাঁকে ব্যাংকের পাশে একটি মসজিদ থেকে ধরে নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। পরে তাঁকে নিয়ে ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ডাকাতির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পরে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ প্রশাসন বলছে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) জড়িত এই অপহরণে। অস্ত্রধারীদের পোশাকেও কে এন এফ লেখা ছিল।
রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে হামলা করেও অস্ত্রধারীরা কোনো টাকা নিতে পারেনি। তবে গতকাল বুধবার বেলা একটার দিকে থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় হামলা করে তারা সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যায়। হামলাকারীরা নিজাম উদ্দিনকে অপহরণের পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করেছে। মানুষের মুঠোফোনও নিয়ে গেছে তারা।
রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির সঙ্গে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফ সদস্যরা জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, থানচিতে হামলার সঙ্গেও একই গোষ্ঠী জড়িত।
কেএনএফ পাহাড়ের অপেক্ষাকৃত নতুন সশস্ত্র সংগঠন। তারা ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ আলোচনা হয় গত ৫ মার্চ। এরপর হামলার ঘটনা ঘটল।
স্বামীকে অক্ষত ফেরত চান স্ত্রী
দুই দিনেও স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনের হদিস না মেলায় চরম আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর স্বজনদের। নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী কলেজশিক্ষক মাইসুরা ইসফাত মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বামীর খোঁজ না পেয়ে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে। তিনি জীবিত না মৃত, তা–ও জানি না। প্রশাসনের কেউ স্বামীর খোঁজ দিতে পারছে না। তাকে অক্ষত ফেরত চাই।’
নিজাম উদ্দিন বান্দরবান রুমা উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব উপভোগ করতেন বলে জানান স্ত্রী মাইসুরা ইসফাত। তিনি বলেন, ‘রুমায় এত ঘটনা ঘটলেও কখনো কল্পনা করিনি আমার স্বামীকে কেউ অপহরণ করবে। তিনি কাজপাগল ছিলেন।’
নিজাম উদ্দিনের স্ত্রীর কথার সত্যতা পাওয়া যায় সোনালী ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্যে। সোনালী ব্যাংক বান্দরবান শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মনিরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজাম কাজপাগল অফিসার। তাঁকে ব্যাংকের গ্রাহকেরা অনেক পছন্দ করেন। ব্যাংকে কাজের ঝামেলা হলে গ্রাহকদের সুবিধার্থে তিনি নিজে সিট থেকে উঠে টাকা লেনদেন করতেন। নিজামকে আমরা জীবিত ফেরত চাই।’
গতকাল বুধবার নিজামের খোঁজ নিতে আসেন গ্রাহক কামাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক ভালো অফিসার ছিলেন নিজাম। আমরা চাই তিনি ফিরে আসুন।’ নিজামকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানান বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন ‘আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার, সব করা হচ্ছে।’
নিজামের স্ত্রী মাইসুরা ইসফাত সারাক্ষণ মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে আছেন। স্বামীর কোনো খবর পাবেন এই আশা তাঁর। কখন স্বামী ঘরে ফিরে আসবেন, সেই অপেক্ষায় আছেন তিনি।