আজও কালো ডিম পাড়ল গলাচিপার পাতিহাঁসটি
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ক্লোজার বাজার এলাকার দেশি পাতিহাঁসটি আজ শুক্রবারও একটি কালো ডিম পেড়েছে। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে হাঁসটি পাঁচটি কালো ডিম পাড়ল। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ডিমগুলো দেখার জন্য আসছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ক্লোজার বাজার এলাকার গৃহবধূ লাইজু আক্তার দীর্ঘদিন ধরে ১০টি পাতিহাঁস পালন করছেন। এর মধ্যে গত সোমবার প্রথম খামারের একটি কালো রঙের পাতিহাঁস একটি কালো ডিম পাড়ে। পরদিন আবারও সেই দেশি পাতিহাঁস কালো ডিম পাড়ার পর এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। কালো ডিম দেখার জন্য প্রতিদিন এলাকার মানুষ লাইজু আক্তার-মোহাম্মদ সরদার দম্পতির বাড়িতে আসছে।
মোহাম্মদ সরদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম তিন দিনের পাড়া ডিমগুলো ছিল কুচকুচে কালো। বৃহস্পতি ও শুক্রবার পাড়া ডিম দুটির কোথাও কোথাও নীলচে ছোপ আছে। আগের ডিমের তুলনায় কালো অনেকটা কম দেখাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কৌতূহল থেকে তিনি একটি কালো ডিম ভেঙেছেন। তবে এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাননি। অন্য ডিমের মতোই এগুলো স্বাভাবিক এবং ডিমের স্বাদও একই ধরনের। অন্য চারটি ডিম তিনি একটি আলাদা খাঁচার মধ্যে রেখেছেন। লোকজন এসে দেখে যাচ্ছে।
লাইজু আক্তার বলেন, এর আগেও তিনি বাড়িতে দেশি হাঁস পালন করেছেন। সেই হাঁসের ডিম থেকে এই বাচ্চা ফোটানো হয়েছে। এখন সেই হাঁসই কালো ডিম পাড়ছে। তিনি হাঁসগুলোকে স্বাভাবিক খাবারই খেতে দেন।
বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সজল কুমার দাশ বলেন, দেশীয় প্রজাতির হাঁসটি কোনো কারণে হয়তো বেন্ডিং জাতের হাঁসের সঙ্গে ক্রস হতে পারে। বেন্ডিং জাতের হাঁস নীল বর্ণের ডিম দেয়। তবে কালো ডিম কেন পাড়ছে, এ ব্যাপারে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হরমোনের কারণেও হতে পারে। আপাতত এটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, তাঁদের দপ্তর থেকে ওই বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। আজকে পাড়া ডিম আগের পাড়া ডিমের থেকে কম কালো। ডিমের এক স্থানে নীলচে ছোপ। তাঁরা হাঁস ও ডিম পাড়া পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছর অক্টোবরের শেষ দিকে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে একটি দেশি পাতিহাঁস কালো ডিম পেড়েছে। এর আগে সেপ্টেম্বরে ভোলার চরফ্যাশনেও একটি দেশি পাতিহাঁস কালো ডিম পেড়েছিল।
তবে হাঁসের ডিম যে একেবারেই কালো রঙের হয় না, তা কিন্তু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কায়োগা জাতের হাঁসের ডিম সাধারণত কালো হয়ে থাকে।
ডিমের খোলস সাধারণত তৈরি হয় ক্যালসিয়াম কার্বনেটের মাধ্যমে। ডিমের খোলস সাধারণভাবে সাদা হলেও প্রায়ই হালকা সবুজ, নীলচে আভা ও হালকা গোলাপি রঙের ডিম চোখে পড়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রঙের এই পরিবর্তনের পেছনে দুটি জৈব উপাদান ভূমিকা রাখে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক আ ন ম আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণিদেহের রক্তকণিকা ভেঙে বিলিভারডিন নামে একটি উপাদান বের হয়। এটা কম-বেশি হওয়ার কারণে ডিমের খোলসের রং নীলচে বা সবুজাভ হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে জরায়ুতে ডিমের খোলসটি পরিণত হওয়ার সময়ে তাতে গাঢ় সবুজ রঙের পিত্তরস বেশি থাকতে পারে। ওই দুটি উপাদান জরায়ুতে বেশি থাকলে তা থেকে ডিমটির রং কালো হতে পারে। এ ধরনের কালো ডিম হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে খুবই ব্যতিক্রম।