গ্রামবাসীর মুষ্টি চাল ও স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে দুই কিলোমিটার রাস্তার সংস্কারকাজ
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর করতে নিজেদের অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার সংস্কারকাজ করছেন একটি গ্রামের বাসিন্দারা। গত বুধবার থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে।গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে মুষ্টির চাল সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় তহবিল গঠন করা হয়েছে।
উপজেলার বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের ওই গ্রামের নাম কৃষ্ণপুরদীঘা। গ্রামটির ইক্ষু ক্রয়কেন্দ্র থেকে রাস্তাটি শুরু হয়ে মোমিনপুর গ্রামের প্রধান সড়কের সঙ্গে মিলেছে। মোমিনপুর-কৃষ্ণপুরদীঘা রাস্তাটি দিয়ে মোমিনপুর হাট, স্কুল-মাদ্রাসা ও কবরস্থানে যাতায়াত করেন কৃষ্ণপুরদীঘা, আসামপাড়া, মধ্যপাড়া, কবিরাজপাড়া ও মোমিনপুর গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাও মুশকিল হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংস্কারকাজ শুরুর দুদিন আগেও এ কাঁচা রাস্তাটি যাতায়াতের অনুপযোগী ছিল। চলতি বর্ষায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি কাদায় ভরে উঠেছিল। কাদায় ঢেকে থাকা খানা-খন্দে প্রায়ই ঘটত দুর্ঘটনা। এমনকি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু রাস্তাটি সংস্কারে তেমন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
এলাকার বাসিন্দারা অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে নিতে বেশ ভোগান্তিতে পোহাতে হয়। সম্প্রতি কৃষ্ণপুরদীঘা গ্রামের রুমা বেগম নামের এক গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়েন। খারাপ রাস্তার কারণে দ্রুত তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বাসিন্দারা আলোচনার মাধ্যমে নিজেরাই রাস্তাটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য রাস্তা মেরামত তহবিলও গঠন করা হয়। তাঁরা গ্রামটির প্রতিটি বাড়ি থেকে চালের মুষ্টি তুলে তহবিলে জমা করেন। তবে অনেকে নগদ টাকাও জমা করেছেন। যাঁরা টাকা ও চাল দিতে পারেনি, তাঁরা শ্রম দিয়ে রাস্তা মেরামতে অংশ নিয়েছেন।
কৃষ্ণপুরদীঘা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, চার গ্রামের মানুষ মারা গেলে তাঁদের মরদেহ এই রাস্তা দিয়ে কবরস্থানে নেওয়া হয়। হাটবাজারে যাতায়াতের জন্যও রাস্তাটি একমাত্র ভরসা। অথচ প্রশাসন দীর্ঘদিনেও রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। তাই নিজেরাই সংস্কার কাজে হাত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হালিমা খাতুন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে যোগাযোগ করেও আমি রাস্তাটি পাকা করতে পারিনি। তাই গ্রামবাসীকে নিয়ে নিজেরাই রাস্তাটি সংস্কারে নেমেছি। আমরা আপাতত ইটভাটার পোড়া মাটি (সুরকি) এনে রাস্তায় ঢেলে রাস্তাটি যাতায়াত উপযোগী করছি।’
আরেক ইউপি সদস্য মারুফ হোসেন বলেন, সংস্কারকাজে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। যাঁরা সরাসরি শ্রম দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য লোকজন খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াচ্ছেন।’
গ্রামবাসীর কাজে অভিভূত বলে জানিয়েছেন একই ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান আলী। তিনি জানান, রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামবাসীর যেটুকু কাজ করছেন, তাতে তিনি অভিভূত। রাস্তাটি পাকা করার জন্য তিনি উদ্যোগ নেবেন।
উপজেলা প্রকৌশলী অনুপ কুমার ঘোষ বলেন, তিনি রাস্তাটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। বিস্তারিত জেনে রাস্তাটি পাকা করার প্রকল্প নেওয়া হবে। তবে গ্রামবাসী যে কাজটি শুরু করেছেন, তা ধন্যবাদ পাওয়ার মতো।